নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: নারীরা সমাজের বোঝা নয় বরং কঠোর পরিশ্রম তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। দিনাজপুরের হিলির বোয়ালদার গ্রামের রোকেয়া বেগম তার যেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুই পা হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি নয় বরং ভ্যানের চাকায় চলছে তার সংসার। রোকেয়ার জীবনী থেকে অনেকেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
হিলি সীমান্ত থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে বোয়ালদার গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম। স্বামী নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল তার সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় রোকেয়ার জীবনে। ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই পা হারান তিনি, সংসারে নেমে আসে সীমাহীন অভাব। আর অভাবের কারণে রোকেয়াকে রেখে সংসার ছেড়ে পালিয়ে যান তার স্বামী। তবুও জীবন-সংগ্রামে থেমে নেই রোকেয়া। সংসারের হাল ছাড়েননি তিনি। নামেননি ভিক্ষাবৃত্তিতে বরং কষ্টের জমানো টাকায় কেনা ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে চলে তার সংসার।
আরও পড়ুন: ‘ছিলাম ভূমিহীন, এখন জমি ও ঘরের মালিক, আল্লাহ শেখ হাসিনাক শান্তি দিক’
রোকেয়া বলেন, কয়েক বছর আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছি। এরপর আমাকে ফেলে রেখে স্বামী চলে গেছে, সংসার দেখার মতো কেউ ছিল না। অনেক কষ্ট নিয়ে কোনো রকমে সামান্য টাকা দিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনি। সেই ভ্যান চালিয়ে যে টাকা পাই সেটা দিয়ে আমার সংসার চলে। আমি কারো কাছে ভিক্ষা চাই না বরং নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে আমি চলি।
তিনি আরো বলেন, আমার কোনো জায়গা-জমি ছিল না, সরকার আমাকে জায়গা দিয়েছে কিন্তু বাড়ি করার কোনো সামর্থ্য নেই। যা উপার্জন করি তা আমার খেতেই চলে যায়। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাকে যদি একটা বাড়ির ব্যবস্থা ও ভালো একটি ভ্যান দিত তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হতো।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন জানান, রোকেয়ার পা কেটে যাওয়ার পর তিনি অনেক কষ্ট করে দিনপার করেন। তারপরও ভিক্ষা করেন না। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। আসলে এটি আমাদের সমাজের জন্য নিশ্চয় একটি ভালো দিক। সমাজে এমনও মানুষ আছে সামান্য কিছুতেই বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তির পথ। তবে সেসব মানুষকে শিক্ষা নেওয়া উচিত রোকেয়ার জীবন থেকে।
জীবন চলার পথে থমকে যাবে না নারীরা। রোকেয়ার মতো উঠে দাঁড়াবেন- আজকের নারী দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।