মানব দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো হার্ট বা হৃদপিণ্ড। এই হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকলে পুরো শরীর সুস্থ থাকে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। তাই হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চার পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত ও মহান আল্লাহর জিকির করা জরুরি।
এই সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন : حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ، عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيِنِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ. أَلاَ وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلاَ إِنَّ حِمَى اللَّهِ فِي أَرْضِهِ مَحَارِمُهُ، أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ. أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ”.
অর্থ : হজরত নু’মান ইবনু বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ’হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়— যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্র সংরক্ষিত চারণভূমির আশপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরও জেনে রাখ যে, আল্লাহর জমিনে তার সংরক্ষিত এলাকা হলো তার নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি মাংসের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে মাংসের টুকরোটি হলো কলব (হৃদপিণ্ড)। (সহীহ বুখারী, হাদিস : ৫০)
কোরআনুল কারিমের আমলেও হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও ব্যধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। যারা নিয়মিত কোরআনের আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাদের হৃদপিণ্ডের ব্যথাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যধিগুলো দূর করে দেবেন। দোয়াটি হলো-
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكْرِ ٱللَّهِ تَطْمَئِنُّ ٱلْقُلُوبُ
উচ্চারণ : আল্লাজিনা আমানু ওয়া তাত্বমাইন্নু ক্বুলুবুহুম বিজিকরিল্লাহি আলা বিজিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল ক্বুলুবু। (সূরা: আর-রাদ, আয়াত ২৮)।
অর্থ : তারাই ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই দিলের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।
যে ব্যক্তি সূরা আর-রাদের উল্লেখিত আয়াতটি নিয়মিত ৪১ বার পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ব্যথা ও রোগ-ব্যধি ভালো করে দেবেন।
হাদিসে এসেছে : حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي نَافِعُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ الثَّقَفِيِّ، أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَعًا يَجِدُهُ فِي جَسَدِهِ مُنْذُ أَسْلَمَ . فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي تَأَلَّمَ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ بِاسْمِ اللَّهِ . ثَلاَثًا . وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ ” .
অর্থ : হজরত উসমান ইবনু আবূল আস-সাকাফী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল (সা.) এর কাছে একটি ব্যথার কথা বললেন, যা তিনি মুসলিম হওয়ার সময় থেকে তার শরীরে অনুভব করেছেন। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, তোমার শরীরের যে অংশ বেদনাক্রান্ত হয়, তার ওপরে তোমার হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলবে এবং সাতবার বলবে :
أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
উচ্চারণ : আউজু বিইযযাতিল্লাহি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন সাররি মা আঝিদু ওয়া উহাজিরু। (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ৫৫৪৯)
অর্থাৎ আল্লাহ এবং তার কুদরতের শরণাপন্ন হচ্ছি যা আমি অনুভব করি এবং যা আশঙ্কা করি, তার অকল্যাণ থেকে।
সুতরাং রাসূল (সা.) এর শেখানো এ দোয়া এবং আমলটি করে ব্যথা থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারি।
উপরুক্ত আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশি বেশি জিকির করা জরুরি। সুতরাং আল্লাহর স্মরণ ও কুরআনের আমলই মানুষকে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যাবতীয় রোগ-ব্যধি ও ব্যথা থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হার্ট বা হৃদপিণ্ডের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত কোরআনের আমল করার তাওফিক দান করুন। বুকের সব ধরনের ব্যথা থেকে হেফজাত করুন। আমিন।