উন্নয়ন

হাওরবাসীর স্বপ্নের সড়ক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী | নৈসর্গিক সৌন্দর্যে অভিভূত বঙ্গবন্ধু কন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: সৌন্দর্যের লীলাভূমি হাওরের রূপ দেখতে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক দেখতে যেতে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘হাওরের বিস্ময়’ প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম মহাসড়কটিকে মুজিববর্ষে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন।

হাওরবাসীর স্বপ্নের এই সড়ক উদ্বোধন ঘোষণার পর ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। এসময় হাওর ও সড়কটির সৌন্দর্য দেখে অভিভূতি হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ইশ! কবে যে যাবো। এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাবো।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনটা পড়ে থাকলো। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে কবে যাবো। মহামান্য রাষ্ট্রপতিও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাবো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাবো।’

গণভবন থেকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন মিঠামইনের সন্তান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।অনুষ্ঠানে মিঠামইন প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধন করা সড়টির হাত ধরে বদলে গেছে কিশোরগঞ্জের হাওরের দৃশ্যপট। এক সময়ের বিচ্ছিন্ন ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা যুক্ত হয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। সকল আবহাওয়াতেই সচল দৃষ্টিনন্দন অল-ওয়েদার সড়কটি দেখতে পর্যটকরা দলে দলে ভিড় করছে হাওরে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন সম্ভাবনার পাশাপাশি সারাদেশের সাথে সড়কপথে হাওরের যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে এই সড়ক।

জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অল ওয়েদার সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর পর্যন্ত বাড়ানো হবে সড়কটি। এ কাজটি শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। কেবল বর্ষায় নয়, শুকনো মৌসুমেও হাওরে চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে ৩৬ কিলোমিটার সাব-মার্সেবল সড়ক। নদ-নদীতে বসানো হয়েছে বেশকিছু ফেরি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বাংলাদেশে একটা সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি; যাতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা… নৌপথগুলো সচল করা… সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ পুনরায় স্থাপন করে এবং আরো নতুন নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলে যোগাযোগের সুযোগটা বাড়াচ্ছি। নৌপথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি, সড়ক পথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি।

“যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।”

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, সড়কটি আরো দৃষ্টিনন্দন করতে দুইপাশে গাছপালা লাগানোর পৃথক আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিতে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি এই উদ্যোগটা না নিতেন, আর বারবার আমাদেরকে না বলতেন, তাহলে তো এই অঞ্চলে যে এই রকমভাবে রাস্তা করা যায়, এটা হয়ত চিন্তারই বাইরে ছিল। কিন্তু আজকে তার অনুপ্রেরণা এবং তারই উদ্যোগে এই রাস্তাটি আমরা করতে পেরেছি।”

এই সড়ক হওয়ায় কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষের এখন আর সেই আগের মতো দুঃখ থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *