নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বিভিন্ন ধরনের পাখিতে মুখর আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। কোনো কোনো পাখি আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে মানুষের খুব কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।
কোনো কোনোটা আবার বনের পাখি। যাকে কখনোই শহর বা গ্রামে দেখা যায় না। ওরা বনে থাকতেই পছন্দ করে বেশি।
কোনো কোনো পাখিদের আবার বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অঞ্চলে মাত্র অল্প কিছুদিনের জন্য দেখা যায়। কোনো কোনো পাখি রয়েছে যাদের প্রতি বছর সহজে দেখাই যায় না। কয়েক বছর পর পর হঠাৎ করে দেখা যায়।
এভাবেই নানান বৈচিত্র্যের পাখিতে ভরে উঠেছে আমাদের দেশ। যেসব পাখিরা অতি বিরল বা অতি দুর্লভ তাদের পরিচিতি তেমনভাবে ফুটে উঠেনি সর্বসাধারণের মধ্যে। চেনার সুযোগ হয়নি এই পাখিগুলো সম্পর্কে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে চিত্রা শালিকের কিছু ছবি ধারণ করেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী তিমু হোসেন।
তিনি বলেন, এই পাখি বাংলাদেশে খুবই কম দেখা যায়। এদের নাম চিত্রা শালিক। এরা খুব চতুর এবং দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম। দ্রুত উড়ে যায় কিনা – এই ভয়ে ছিলাম! পরে এই ছবিগুলো ধারণ করতে সক্ষম হই। এই পাখিটিকে ‘অতি দুর্লভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও লেখক শরীফ খান।
তিনি বলেন, চিত্রা শালিক ৩ থেকে ৫ বছর পরপর মাত্র একবার দেখা যায়। এই পর্যন্ত আংগুলে গুনলে দেখা গেছে মাত্র ১০ বার। এখন বুঝে নেন– কতটা দুর্লভ এই পাখিটি! এই চিত্রা শালিকের ইংরেজি নাম Common Starling এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus vulgaris। এরা দৈর্ঘ্যে ২০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
চিত্রা শালিকের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শরীফ খান বলেন, শীতকালে পাখিটিকে দেখতে আরো আকর্ষণীয় লাগে। ঘাড়-গলা-বুক-পেটে সুবিন্যস্ত ও সারিবদ্ধভাবে সাদা সাদা ফোঁটা বা চিতি থাকে। সাদা ফোঁটাগুলোর ঘনবদ্ধতার জন্য খুব সুন্দর দেখায় পাখিটিকে। শীতেই পিঠ-ঘাড় বাদামি। পা গোলাপি, ঠোঁট ধূসরাভ। শীতের বাইরে প্রজনন মৌসুমে পাখিটির ঠোঁট থাকে হলুদ, পা কালচে বাদামি। ঠোঁটটি বেশ লম্বা এবং চোখা ও ধারালো।
বাংলাদেশে খুবই কম, ক্বচিৎ দেখা মেলে। তাই এরা অতি দুর্লভ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সন্দ্বীপ, সুন্দরবনের চরসহ ঢাকা বিভাগে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যায় বলে জানান এ পাখিবিদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন পাখির ছবি পোস্ট সম্পর্কে পাখি গবেষক শরীফ খান বলেন, ‘এখনকার পদ্ধতি হয়ে গেছে অন্যরকম। নতুন পাখি দেখার সঙ্গে সেই পাখির ছবি থাকতে হবে। আমাদের সময় এমনটা ছিল না। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার এলাকায় আমি বহুবার গিয়েছি। নতুন নতুন পাখি শুধুমাত্র চোখে দেখে সেই পাখির ওপর নানান প্রবন্ধ লিখেছি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। এখন সেই পদ্ধতি অচল। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেই নতুন পাখিটির পোস্ট দেওয়া ছাড়া নতুন কোনো পাখি দেখার রেকর্ড বিশ্বাসযোগ হয় না’।
চিত্রা শালিকের পুরাতন স্মৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে বাগেরহাট-ফরিদপুরে এই পাখি আমি একাধিকবার দেখেছি। তবে এটা যে চিত্রা শালিক-এটি আমি বহু পরে জেনেছি। এটাকে আমরা ‘চ্যাগা’ জাতীয় পাখি হিসেবেই মনে করতাম। ১৯৮৬ সালে এসে আমি এই পাখিটাকে চিত্রা শালিক হিসেবে জানলাম। আমাদের স্থানীয় বাজারে এই পাখিগুলো তখন পাখিবিক্রেতারা বিক্রি করতো। মুরগির বাজারের সঙ্গে পাখির বাজার বসতো। তখন তো বন্যপ্রাণী আইন ছিল না, ফলে পাখি বিক্রি এখনকার মতো নিষিদ্ধ ছিল না’।
আক্ষেপ প্রকাশ করে শরীফ খান বলেন, ‘এখন যদি আপনাকে বলি যে, এই চিত্রা শালিক পাখিটিকে আমি ১৯৮৬ সালের আগে ৩ বার দেখে দেখেছিলাম, আপনাকে আমার এ তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য করাতে পারবো না। কেননা, আমি পাখিটির আলোকচিত্রসহ অন্যান্য কোনো রেকর্ড রাখিনি। আর আমার কাজও তা নয়। আমি পাখি নিয়ে লেখালেখি করি। আমি আমার চোখ দিয়ে যে পাখি দেখেছি তাকে নিয়েই লেখার চেষ্টা করেছি। পাখি দেখার কোনো প্রমাণ রাখিনি, তার মানে তো এই নয় যে, আমি সেই পাখিটি দেখিনি’।
১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই চিত্রা শালিক মোট ১০ বার দেখে গেছে। সেন্টমার্টিনে এই চিত্রা শালিক প্রথম দেখেছিলেন আমার বন্ধুপ্রতিম বন্যপ্রাণী গবেষক ড. রেজা খান বলে জানান পাখি বিশারদ শরীফ খান।
আরো পড়ুন:
Pingback: সাতটি লাফিং কুকাবুরা পাখি গেল সাফারি পার্কের কোয়ারেন্টিনে |