খাদ্য-পুষ্টি

হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে গোলমরিচ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: প্রতিদিন আমরা খাবারের স্বাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যবহার করি। কোন মশলার কী উপকারিতা বা অপকারিতা জানলে খাবারের সাথে সেইমশলার ব্যবহার আমরা জেনে-বুঝে করতে পারি। ক’দিন আগে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল হলুদ। আর আজ – গোলমরিচ। কারণ গোলমরিচকে বলা হয় মশলার রাজা। গোলমরিচের ইংরেজি নাম Black Pepper। এর Pepper শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষার “পিপালী” শব্দ থেকে, যার অর্থ দীর্ঘ মরিচ। এখান থেকে উদ্ভূত হয়েছে লাতিন ভাষার piper যা মরিচ ও গোল মরিচ দুটোকেই বোঝানোর জন্য রোমানরা ব্যবহার করতো।

গোলমরিচের ইতিহাস
প্রথম এটা পাওয়া যায় আমাদের দক্ষিণ ভারতে। পরে এর উৎপাদন বিভিন্ন গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আজ ভিয়েতনাম এর সর্বাধিক উৎপাদক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে এই গোলমরিচ। একসময় গ্রীসে মুদ্রাহিসাবেও এর ব্যবহার ছিল। একে অনেক জায়গায় Black Gold হিসেবেও ডাকতো। সারা বিশ্বে মশলাপাতির বাণিজ্য ক্ষেত্রে গোলমরিচ এক বড় স্থান করে নিয়েছিল। তাই বহুযুগ ধরে ভারতবর্ষের উপর নজর ছিল বিশ্বের বণিক সম্প্রদায়ের।

আরও পড়ুন: পেয়ারার পুষ্টিগুণ জানলে আপনি অবাক হবেন

কী আছে গোলমরিচে
গোলমরিচে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন, নেই চর্বি এবং কোলেস্টেরল। রয়েছে B2, C, K, B6 ভিটামিন। মিনারেলের মধ্যে রয়েছে- আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ, জিংক, ক্রোমিয়াম। গোলমরিচ ঝাল হয় কেন পিপারিন নামক এক রাসায়নিক উপাদান থাকে বলে গোলমরিচে ঝাল হয়।

১. হজমশক্তি বাড়াতে:- হজমের জন্যে যে লালা রস ও এনজাইম প্রয়োজন, গোলমরিচ তা বৃদ্ধি করে হজমশক্তি বাড়ায়। খাবারের সাথে গোলমরিচের মিশ্রণ থাকলে তা পুরো হজম প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখে ও পেটে গ্যাস হতে দেয় না।

২. ক্যান্সার:- ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। গোলমরিচ- সেলেনিয়াম, কারকুমিন, বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন বি; এসবের নিউট্রিশাস ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়ে পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। কানাডার এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলমরিচ মলদ্বারের স্ট্রেস কমিয়ে দিয়ে কোলন ক্যান্সার হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

৩. উচ্চ রক্তচাপ কমায়:- গবেষণায় প্রমাণিত যে, গোলমরিচের নিয়মিত সেবন উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখে। যেকোনো সংক্রমণ (পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস) থেকেও রক্ষা করে।

৪. এন্টিঅক্সিডেন্ট:- গোলমরিচের এন্টিঅক্সিডেন্টের কাজ অনেক বেশি। যেমন- ফ্রি রেডিকেল কমায়, যা মুখে বয়সের ছাপ পড়ার জন্যে দায়ী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

৫. মুখের যত্নে:- ঠোঁটে ঘা হলে, দাঁতের মাংস লাল হলে, দাঁতে ব্যথা হলে, গোল মরিচের সেবন এসব দূর করে। সামান্য গোল মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ ও পানি মিশিয়ে গরম করে গড়গড়া করলে মাড়ির ঘা দূর হয়।

৬. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায়:- গোলমরিচ সেরোটোনিন ভেঙে ফেলে যা মস্তিষ্কের জন্যে ক্ষতিকর। একটা সময় বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের নিউরনগুলোও মারা যেতে শুরু করে। গোলমরিচ এই নিউরনগুলোকে দেরিতে ভাঙতে সাহায্য করে। অর্থাত্‍ মস্তিষ্কের বয়স বেড়ে যাওয়া রোধ করে ও অ্যালজাইমার রোগ থেকেও রক্ষা করে।

৭. যৌন ক্ষমতা ও ধূমপান:- গোলমরিচ ছেলেদের যৌন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে।

৮. ডায়াবেটিস:- রক্তের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে গোলমরিচ। ২০১৩ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলমরিচ সেই এনজাইমকে ভেঙে ফেলে যেটা শর্করা খাবারকে গ্লুকোজে পরিণত করে। এছাড়াও শরীরের গ্লুকোজকে ধীরে ধীরে শোষণ করতে সাহায্য করে।

৯. খুশকি দূর করে:- যাদের চুলে খুশকি রয়েছে, গোলমরিচ তাদের জন্যে উত্তম। এ ক্ষেত্রে এক চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়া, এক কাপ টক দই, এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগানোর ৩০ মিনিট পরে শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে পরের দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

১০. চুলের যত্নে:– এক চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়া, দুই চা-চামচ লেবুর রস, দই এক কাপ ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হবে (স্ক্যাল্পে)। তারপর ১৫-২০ মিনিট রেখে

শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন চুলের যত্ন নিলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, ঝলমলে ও সিল্কি হবে। একইসঙ্গে টাক হওয়া থেকেও রক্ষা করবে।

এছাড়াও নিয়মিত গোলমরিচ খেলে ব্রংকাইটিস হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এ মশলাটি যদিও গোলমরিচের নানারকম উপকারিতা আছে, কিন্তু যেকোনো খাদ্যের মত গোল মরিচেরও  কিছু কিছু অপকারিতা রয়েছে। এটা খুবই  স্বাভাবিক, যে কোনো জিনিসই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া ঠিক নয়। তাই, গোলমরিচও অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যা দেখা  দিতে পারে। আসুন বিস্তারিত দেখে নেওয়া যাক:

১. চোখ লাল হওয়া
গোল মরিচ চোখের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। কোনোভাবে যদি ভুল করে চোখে গোল মরিচ ঢুকে যায়, তাহলে চোখ লাল হয়ে খুব জ্বালা করতে পারে।

২. স্তন্যপান করানোর সময় বা গর্ভাবস্থার সময় ক্ষতিকর গর্ভাবস্থার সময় বা স্তন্যপান করানোর সময় আপনি যদি সামান্য গোল মরিচ খেয়ে থাকেন, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী, কিন্তু বেশি খেলে তা নানারকমের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি, এটি গর্ভপাতেরও কারণ হতে পারে।

৩. পেট গরম হওয়া
অতিরিক্ত গোল মরিচ খেলে পেট গরম হতে পারে যার ফলে জ্বর হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই প্রতিদিন একদম অল্প পরিমাণ গোল মরিচ খান যাতে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *