ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: জিরা আসলে একটি ফুলের গাছ যা প্রায় এক ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি ভারত, মেক্সিকো, চীন এবং ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিসহ বেশ কয়েকটি মহাদেশ জুড়ে জন্মায়। গ্রীষ্মের সময় সাদা বা গোলাপী ফুল ফোটে, তবে এটি হলুদ-বাদামী বর্ণের বীজ, যা তাদের ভোজ্য গুণাবলীর জন্য সংগ্রহ করা হয়।
মসলা হিসেবে জিরার বহুল ব্যবহার আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে খাবারের স্বাদ আর গন্ধ বাড়াতে জিরার তুলনা হয় না। তবে এই জিরা শুধু মসলা হিসেবেই নয়, সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতেও বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। তা হয়তো অনেকেই জানেন না। জিরা ভেজানো পানি আমাদের শরীরের অনেক রোগ-বালাই দূরে রাখতে সহায়তা করে। এমনকি মেদ ঝরাতেও এর জুরি নেই। আসুন জেনে নেয়া যাক জিরার কিছু অসাধারণ কার্যক্ষমতা:
আরও পড়ুন: গ্যাস্ট্রিক-সহ নানা অসুখ দূর করে কাঁচা পেঁপে
১. ওজন কমায়
জিরার পানি দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। দিনে দু’বার এই জিরাপানি খেলে এটি পেটের ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছেটা কমে যায়। ফল হিসেবে আপনি পাবেন কাঙ্ক্ষিত ওজন।
২. রোগ প্রতিরোধ
আয়রনের চমৎকার একটি উৎস জিরা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে জিরাতে থাকা আয়রন খুবই গুরুত্বর্পূণ। জিরাপানি মানবদেহে আয়রনের চাহিদা মিটিয়ে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে তুলতে পারে। এছাড়াও জিরা পানিতে ভালো পরিমাণ ভিটামিন এ ও সি থাকায় অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. রক্তশূন্যতার চিকিৎসা
জিরাতে থাকা আয়রন রক্তস্রোতে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়া জিরাপানি আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার জন্য বেশ উপকারী।
৪. অ্যাসিডিটি কমায়
জিরাপানি অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধী ক্ষমতা রাখার জন্য ভালো। যেকোনো ভারি খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে জিরা পানি খেয়ে নিলে অ্যাসিডিটির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
জিরাপানি পানের বড় একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দিনে দুইবার এই পানীয়টি পান করলে উপকার পাবেন।
৬. বমিভাব দূর
জিরাপানি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভবতী যেসব মা বমির সমস্যায় ভোগেন তারা এটি পান করতে পারেন। ‘মর্নিং সিকনেস’ থেকেও মুক্তি পেতে জিরাপানি খাওয়া যেতে পারে।
৭. নিদ্রাহীনতা দূর
যাদের মাঝে ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য জিরাপানি খুব উপকারী। নিয়মিত খেলে নিদ্রাহীনতা দূর হয়।
৮. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
জিরা মস্তিষ্কের শক্তিকে উন্নত করে। তাই অল্প বয়স থেকেই যদি জিরাপানি খাওয়া যায় তাহলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ণ করে।
৯. শরীরের দূষণ দূর
জিরাপানি যকৃৎ ও পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী। জিরার মাঝে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের এবং ভেতরের অঙ্গের বিষাক্ততা দূর করে। দেহের পানিশূন্যতা দূর করে দেহকে আর্দ্র রাখে।
১০. তলপেটের ব্যথা দূর
ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন অনেক নারীই, তাদের এই ব্যথা কমাতে অল্প অল্প করে সারাদিন জিরাপানি খেলে উপকার পাওয়া সম্ভব।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
জিরার যেমন উপকারি দিক রয়েছে তেমনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে । আসুন সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই:
১. বুক জ্বালা করা
পেটের অম্লভাব দূর করতে এবং হজমে দারুণ সহায়ক জিরা। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য, জিরা মাঝেমধ্যে হজমে বিঘ্ন ঘটায়। হঠাৎ করেই তা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাকে গ্যাস বাড়ার প্রক্রিয়াকে সহজতর করে দেয়। যা কিনা শেষমেশ ‘হার্টবার্ন’-এর সমস্যা সৃষ্টি করে।
২. অতিমাত্রায় ঢেকুর ওঠা
অনেকে হয়তো ভাবতেও পারবেন না যে অতিমাত্রায় ঢেকুর উঠতে পারে জিরার কারণে। এই অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন অন্ত্রনালি ও পাকস্থলী থেকে খাবার ও গ্যাস ওপরের দিকে উঠে আসতে চায়। এগুলো মুখ দিয়ে বের করে দিতেই ঢেকুর ওঠে।
৩. লিভার আর কিডনির ক্ষতি
জিরায় এক ধরনের তেল থাকে। এই তেল কিন্তু উদ্বায়ী পদার্থ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত বেশি পরিমাণ জিরা খেয়ে আসছেন, এই তেল তাদের লিভার ও কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই পরিমাণ বুঝে জিরা খেতে হবে।
৪. গর্ভপাতের শঙ্কা
গর্ভবতী নারীদের জিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। গর্ভকালীন অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দেয়।
৫. নেশাগ্রস্তের মতো অবস্থা
গবেষণায় দেখা গেছে, জিরায় মাদকের মতো আসক্তি তৈরি হয়। বেশি পরিমাণ খেতে থাকলে চিন্তা-চেতনায় ঘোলাটে ভাব চলে আসে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি তন্দ্রাচ্ছন্নতা আর বমি বমি ভাব আসতে পারে।
৬. পিরিয়ডে জটিলতা
এই মশলা অতিরিক্ত খেলে পিরিয়ডকালীন জটিলতা ও ব্যথা বাড়তে পারে। সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তও বেরিয়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণমতো জিরা খাওয়া উচিত।