উন্নয়ন

স্মার্টফোন উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে | আমদানি কমেছে অর্ধেক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: চলতি বছরসহ গত দুই বছরে মোবাইল ফোনের আমদানি প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে ফোন উৎপাদনের পার্টস ও এক্সেসরিজের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ।

বছর কয়েক ধরেই স্থানীয় বড় গ্রুপসহ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোও বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের কারখানা স্থাপন করছে। আমদানি কমাতে শুল্কহারও বাড়িয়েছে সরকার। ফলে বিপ্লব ঘটেছে দেশে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও সংযোজিত মোবাইলই বিক্রি হচ্ছে দেশের বাজারে। চলতি বছরসহ গত দুই বছরে মোবাইল ফোনের আমদানি প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে। একইসঙ্গে ফোন উৎপাদনের পার্টস ও এক্সেসরিজের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ।

মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীরা বলছেন, দেশে স্যামসাং, সিম্ফোনি, আইটেল, ভিভো টেকনো, অপ্পো, রিয়েলমি, ওয়ালটন, উইনস্টার-সহ ১০টি ব্র্যান্ডের কারখানা স্থাপিত হয়েছে। দেশের মোবাইল ফোন চাহিদার ৭৫ ভাগ সংযোজন ও উৎপাদন হচ্ছে এসব কারখানায়। যেখানে কয়েক বছর আগেও মার্কেটের বড় অংশই দখলে ছিল আমদানি করা ফোনের। শুধু গত বছরই আমদানি করা স্মার্টফোনের পরিমাণ কমেছে ৫০ ভাগের বেশি।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসমেন অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট নিজাম উদ্দিন জিতু বলেন, সরকারের কর কাঠামোর কারণে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করেছে অধিকাংশ কোম্পানি। বাংলাদেশে সংযোজনের কারণে এখন সব ব্র্যান্ডই এখন ফোনের পরিবর্তে পার্টস ও এক্সেসরিজ নিয়ে আসছে। করোনাভাইরাসের কারণে সরাসরি আমদানিকারকরাও কিছুটা বাধার মুখে পড়েছেন।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন মোবাইল সেটের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৩ কোটি। এর মধ্যে ৯০ লাখের মতো স্মার্টফোন এবং ২ কোটি ৬০ লাখ ফিচার ফোন। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে স্থাপিত কারখানাগুলোই ৭৫ লাখের বেশি মোবাইল ফোন সাপ্লাই দিচ্ছে। তবে ফিচার ফোনের একটি বড় অংশ এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

সংগঠনটির তথ্যমতে, চলতি বছরসহ গত তিন বছরে দেশে স্মার্টফোন আমদানি ব্যাপকহারে কমেছে। ২০১৭ সালে দেশে ৮১.৬৮ লাখ পিস স্মার্টফোন আমদানি হলেও ২০১৯ সালে তা ২৪ লাখে নেমে আসে। আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও কমে সাড়ে ৯ লাখে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, এ সময়ের ব্যবধানে শুধু কাস্টমস দিয়ে স্পেয়ার পার্টসের আমদানি ১০১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪১৯ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশে স্যামসাং মোবাইলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন জানান, দেশের বাজারে বছরে প্রায় ১০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রেতা- সামস্যাং তাদের ৯৪ শতাংশ ফোন অ্যাসেম্বল করছে নরসিংদীর কারখানায়।

মেসবাহ উদ্দিন বলেন, দেশে উৎপাদন বাড়ায় বিদেশ থেকে স্মার্টফোন আমদানি ১ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৫০ ভাগের বেশি। আগামী ২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্টফোন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। দেশের মুদ্রা ব্যয় করে তখন আর আমদানি করতে হবে না। বরং বাংলাদেশ ২ বছরের মধ্যে স্মার্টফোন রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।

সামসাংও বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করেছে জানিয়ে মেসবাহ উদ্দিন বলেন, এক সময়ের আমদানি নির্ভর মোবাইল খাতকে রপ্তানিমুখী করতে নতুন কারখানা স্থাপনে আরও সুযোগ দিতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোন উৎপাদনের ট্যাক্স ভ্যাট আরও কমাতে হবে। তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।

দেশে মোবাইল উৎপাদনে সবচেয়ে বড় কারখানা ওয়ালটন ডিজিটেক লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, ‘২০১৮ সালে মোবাইল সেট উৎপাদন শুরু করার পর থেকে ওয়ালটন মোবাইল সেট আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ওয়ালটন কারখানায় প্রতি মাসে ৮ লাখ স্মার্টফোন এবং ২০ লাখ ফিচার ফোন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।’

‘ওয়ালটন ২০১৯ সালে ১২ লাখ ১ হাজার ৬২০টি স্মার্টফোন এবং ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০৭টি ফিচার ফোন বিক্রি করেছে। মোবাইল সেট উৎপাদন ছাড়াও মোবাইল এক্সেসরিজ, যেমন- মোবাইল পার্টস, চার্জার, ব্যাটারি, ইয়ারফোন, হর্সিং, প্রিন্টেট সার্কিট বোর্ড- পিসিবি, ইউএসবি ক্যাবল ইত্যাদি উৎপাদন করছে ওয়ালটন। সম্প্রতি ওয়ালটন ১০ লাখ চার্জার, ৬ লাখ ব্যাটারি এবং ৬ লাখ ইয়ারফোন উৎপাদন করেছে,’ যোগ করেন উদয় হাকিম।

সামস্যাং ও ওয়ালটনের মতোই দেশে কারখানা স্থাপন করেছে অপ্পো, ভিভো, নোকিয়া, লাভা, ওকে, ৫স্টার, উইনস্টারসহ ৯টি হ্যান্ডসেট কোম্পানি। সক্ষমতা বাড়িয়েছে আগে থেকেই অপারেশনে থাকা সিম্ফোনিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *