নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঈর্ষণীয় সফল তা অর্জন করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্য সেক্টরে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সফলতা পেয়েছে সরকার। কিন্তু সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর্থিক সংকটে জটিল রোগে আকান্ত রোগীর অকালে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানাবিধ প্রতিকূলতা এবং অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অসাধারণ স্বাস্থ্য সাফল্য এবং এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে।
মা ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস:
মাতৃ ও শিশুমৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে।প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষেত্রে মরণশীলতার হার দাঁড়িয়েছে ২১ জনে, যা ২০১৫ সালে ছিল হাজারে ২৯ জন। আর ২০১৫ সালে হাজারে মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৮১, যা ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশে।সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক:
পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম।মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার।গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে।দেশের ৬৪ টি জেলা এবং ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে ইতোমধ্যে একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে।ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিস। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা।স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।দেয়া হয়েছে সেবা প্রদানকারীদের নাম ও মোবাইল নম্বর সমূহ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে (www.dghs.gov.bd) প্রবেশ করে ‘ই-হেলথ’ এ ক্লিক করলেই বেরিয়ে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। তাৎক্ষণিক ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।এতে সময় ও আর্থিক খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাচ্ছে সেবা গ্রহিতারা।
পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ:
পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের মুম্বাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশে’র ডেপুটি হাই-কমিশনার সামিনা নাজ ২০১৪ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের গভর্নরকে. শংকর নারায়ন-এর কাছ থেকে এ সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।
ধনুষ্টংকার মুক্ত বাংলাদেশ :
২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ৬৯তম সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ধনুষ্টংকার মুক্ত সনদ গ্রহণ করে বাংলাদেশ।
শিশু স্বাস্থ্য পরিসেবা:
দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮২ ভাগ।এক্ষেত্রে হাম ৮৫ ভাগ, ওপিভি ৯৩ ভাগ, বিসিজি ৯৯ ভাগ ও ডিপিট ৩/ পেন্টা ৩ সফলতা পেয়েছে ৮৯ ভাগ।
আন্তর্জাতিক পুরস্কার:
বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘ পুরস্কার অর্জন করেছে।এছাড়াও ২০০৯ ও ২০১২ সালে ২ বার গ্যাভি পদক পেয়েছে।শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের অঙ্গীকার এ সাফল্যের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস:
অবশেষে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের বাস্তবায়ন শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট সকলকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি জরুরি নির্দেশা প্রেরণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক:
প্রতিদিন প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে ৩৮ জন সেবা গ্রহীতা আসছেন। ২৯ প্রকারের ওষুধ বিনামূলে প্রদান করা হচ্ছে।প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি হচ্ছে। এ পর্যন্ত স্বাভাবিক ডেলিভারি লাখ ছাড়িয়ে গেছে।সারাদেশে প্রায় ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন, গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্যখাতের অর্জন ও সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, গত ৫০ বছরে দেশের স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সূচকসহ (গড় আয়ুবৃদ্ধি, টিকাদানের হার, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুরোধ) প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় অভাবনীয় সফলতা এসেছে।দেশের তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যাজিকের মতো কাজ করছে।এক সময় বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা শহরে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা জেলা ও উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশে গত ৫০বছরে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ও বিশেষায়িত শিক্ষা ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি হয়েছে, যারা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ ধূমকেতু বাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে।স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। সীমাবদ্ধ সম্পদ ও বিপুল জনগোষ্ঠী নিয়ে এ অর্জন যে প্রশংসনীয় ব্যাপার তা জাতীয়সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবাই স্বীকার করেন। স্বাস্থ্যখাতের এই অর্জনের জন্য ৩টি জাতিসংঘ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান না অর্জন করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত। এর মধ্যে এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন এই সরকারের এক উলেস্নখযোগ্য অর্জন।
প্রতিবন্ধকতা সমূহ:
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সফলতা থাকা সত্ত্বেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে পারছেন বাংলাদেশ।দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর দক্ষ ও ফলপ্রসূ ব্যবহারের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং সংস্কার করার জন্য প্রচলিত সরকারি নীতিমালা সময়সাপেক্ষ ও জটিল হওয়ায় সেটি প্রায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠে। পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সহ প্রয়োগধর্মী জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও কর্মসূচী।স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার উদ্দেশ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার এখনও যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য জনশক্তির আগ্রহ ও দক্ষতার অভাব এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতা বেশ দৃশ্যমান।সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ওষুধ সরবরাহের অপর্যাপ্ততা, জনবলের অভাব, যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণের দুর্বলতা ও প্রশাসনের জটিলতা এবং সুসংগঠিত রেডারেল পদ্ধতি না থাকায় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না।চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয়ের চাপ কমাতে সরকারি উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্যব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যক্তি নিজে বহন করে:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিটের তৈরি ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ এ্যাকাউন্টস’এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের স্বাস্থ্যখাতে যে অর্থ ব্যয় হয়, তার মাত্র ২৩ ভাগ বহন করে সরকার আর ৬৭ ভাগ ব্যয় করে ব্যক্তি নিজে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যের জন্য নিজের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে।২০১২ সালে স্বাস্থ্যব্যয়ের ৬৩ শতাংশ বহন করত ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে। আর এখন তা বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে।আর এনজিও ও দাতা সংস্থাগুলো বহন করছে ১০ শতাংশ।স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়লেও সরকারী অংশের খরচ কমেছে।
প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসমতা:
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ক্ষুদ্র আয়তন ও সীমিত সম্পদের বিপরীতে রয়েছে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে রয়েছে আকাশচুম্বী বৈষম্য। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিকূল যে, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়।কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত সাফল্য টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ:
বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালসমূহের চিকিৎসা সেবার খরচ অনেক টা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।আর্থিক সঙ্কটে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর অকালে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়:
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে। অপারেশন, সিসিইউ, আইসিসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবার ক্ষেত্রে কোনও টাকা নেয়া যাবেনা।তবে বেশকিছু পরীক্ষা করাতে স্বল্প ফি নেয়া হয়।এক্ষেত্রেও সরকারী ফি বেসরকারী হাসপাতালের ফির তুলনায় অনেক গুণ কম।কিন্তু হাসপাতালের অসাধুচক্রের হস্তক্ষেপে বিনামূল্যের সরকারি চিকিৎসাসেবা অনেক সময় ব্যয় বহুল হয়ে উঠে।সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য বীমা : স্বাস্থ্যবীমার কার্যক্রম কম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগীর সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবীমা চালু থাকলেও বাংলাদেশে এখনও এসে বা সফলভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।স্বাস্থ্যবীমা শুরু হলেও তা দেশের মাত্র একটি জেলার তিনটি থানায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু রয়েছে।সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবীমায় আগ্রহী করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, ‘বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, বস্তি, ভাসমান, চর ও হাওড়াঞ্চলের মানুষ এখনও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেনা।দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ এখনও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়েও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।অথচ আমাদের দেশে চিকিৎসা পেতে যে পরিমাণ অর্থব্যয় হয় এর ৬৭ শতাংশই রোগীকে বহন করতে হচ্ছে।সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের জন্য মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবলও দরকার।দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক থাকলেও নার্স ও টেকনিশিয়ানের ঘাটতি আছে।সুতরাং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা দূরেই আছি।
ইউএইচসি সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান:
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রতিবেদন তুলে ধরে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত, এমপি ধূমকেতু ডটকম কে জানান, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।যেসব কার্যক্রম চলছে তা মিলিয়েও তুলনামূলক চিত্রে অবস্থান ৫০ শতাংশের ওপরে উঠতে পারেনি।অন্যদিকে মানুষের চিকিৎসার জন্য নিজের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি যায় বাংলাদেশে, যা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য অশনি সংকেত।সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন:
আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যানসেট’ এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচীর উদ্যোগ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট কোনও বাজেট বরাদ্দ নেই।এ উদ্যোগে বড় বাধা স্বাস্থ্যখাতের অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য জনবলের (চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান) ৯৪ শতাংশই অদক্ষ।স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামাঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখা কঠিন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য পাথ টু ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী অর্জন করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বাড়তি অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।দক্ষ জনবলের জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পাশাপাশি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখার জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।