পর্যটন ও পরিবেশ

স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন শংকরপাশা শাহী মসজিদ

নবনীতা দত্ত তিথি :

উচাইল মসজিদ কিংবা উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ, ইসলামী স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। এটি হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২২ কি.মি. দূরে সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে অবস্থিত। এই ইসলামী স্থাপত্য আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত।

মসজিদটি কেন এত বিখ্যাত কিংবা কেন এটি হবিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহের একটি প্রশ্নগুলো অনেকের মাথায় আসতেই পারে। উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় মসজিদের ইতিহাসের দিকে তাকালে কিংবা এর স্থাপত্য পর্যবেক্ষণ করলে।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয় এই চমৎকার মসজিদটি। মসজিদের স্থপতি ছিলেন শাহ মজলিশ আমিন (রঃ)। শাহ মজলিশ আমিন (রঃ) ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাছাড়াও শাহ মজলিশ আমিনের রয়েছে আরো একটি পরিচয়। তিনি ছিলেন হযরত শাহজালাল (রঃ) এর ৩৬০ আউলিয়াদের মধ্যে একজন। তিনি উচাইল গ্রামে এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। মসজিদের পাশে রয়েছে উনার মাজার।

মসজিদটি ১৪৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয় ১৫১৩ সালে।

মসজিদে রয়েছে কারুকার্যময় ৬টি খিলান এবং ৪টি গম্বুজ, যার মধ্যে ১টি বড় গম্বুজ এবং বাকি ৩টি ছোট। মসজিদের বাইরে ও ভেতরের দিকে রয়েছে পোড়া ইটের অপূর্ব নকশা। পোড়া ইট কেটে কেটে ইমারতে লাগানো হয়েছে। তাছাড়াও পোড়া ইটে ফুল পাতাসহ বিভিন্ন নকশা আঁকা হয়েছে। এই পোড়া ইটের কাজগুলোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বহুবছর আগে আমাদের স্থাপত্যশিল্প কতোটা চমৎকার ছিল।

মসজিদের দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি বড় দিঘি, যা মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরো কয়েকগুণ।

মসজিদটি লাল রংয়ের বলে স্থানীয় অনেকে একে “লাল মসজিদ” বলে। তাছাড়াও টিলার উপর বলে একে “টিলা মসজিদ” ও বলা হয়। আবার অনেকে “লালটিলা মসজিদ” বলেও ডাকে। তবে হবিগঞ্জের অনেক মানুষের কাছেই মসজিদটি গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিত। কিন্তু কেন একে গায়েবি মসজিদ বলা হয়?

স্থানীয়দের মতে, পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত হওয়ার বেশ কয়েকবছর পর জমিদারদের অত্যাচারে ঐ এলাকার মুসলমানরা বিতাড়িত হয়। তখন মসজিদ এবং মাজার যেন জমিদারেরা ধ্বংস না করতে পারে কিংবা ক্ষতিসাধন না করতে পারে এজন্য গায়েবিভাবেই মসজিদ ও মাজার জঙ্গল বেষ্টিত হয়ে জঙ্গলের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে সুরক্ষিত থাকে। পরবর্তী সময়ে যখন আবার এলাকায় মুসলমানদের আগমন ঘটে তখন তারা জঙ্গলের ভেতর থেকে মসজিদটি আবিষ্কৃত করে। তার কিছু বছর পর শাহ মজলিশ আমিন (রঃ) এর মাজারটি গায়েবিভাবে মাটির নিচ থেকে উপরে উঠে আসে। এজন্যেই মসজিদটি “গায়েবি মসজিদ” নামে পরিচিত। অনেকে আবার মাজারটিকেও “গায়েবি মাজার” বলে।

কিভাবে যেতে পারেন এ জায়গায়?

বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে শায়েস্তাগঞ্জে। শায়েস্তাগঞ্জ হচ্ছে সড়কপথে সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার। এখান থেকেই সিএনজিযোগে আপনি যেতে পারেন মসজিদে।

অথবা হবিগঞ্জ জেলায় এসে সিএনজি কিংবা টমটমে করে আপনি যেতে পারেন মসজিদে। বাইকে করেও খুব সহজে যাওয়া যায় এ স্থানে।

করোনা মহামারির বেশ আগে বন্ধুবান্ধবীদের সাথে নিয়ে আমি যাই মসজিদটি দেখতে। হবিগঞ্জ থেকে টমটমযোগে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লাগে মসজিদে যেতে আমাদের। প্রথমদিকে বাইরের দিক থেকে এ মসজিদের সৌন্দর্য এতোটা না বুঝা গেলেও মসজিদের ভেতরে প্রবেশের পর এর কারুকার্যের সৌন্দর্যে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি যাদের আগ্রহ আছে কিংবা ঘুরে বেড়ানোর শখ বা নতুন কিছু দেখার ইচ্ছা রয়েছে যাদের তারা ঘুরে আসতে পারেন এ জায়গা থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *