নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: একঝাঁক শামুকখোল পাখি বসে আছে গাছের মগডালে। জায়গাটি যেন তাদের অভয়ারণ্য। তারা পাখার ঝাপটা আর কোলাহলে আকাশ-বাতাস যেন মাতিয়ে রাখে। সোনালি রোদ আর গোধূলির মৃদু আলোয় তাদের অপূর্ব সৌন্দর্য ফুটে ওঠে প্রকৃতিতে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সোনাখুলি গ্রামের একটি পুরনো পাকুড় গাছের ডালে ডালে বাসা বেঁধেছে ওই শামুকখোল পাখি। গ্রামবাসী করছেন পাখিগুলোর পরিচর্যা। উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে গ্রামটিকে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের সদস্যরা করছেন নজরদারি। শামুকখোল পাখি এলাকায় ‘কদমা’ নামেও পরিচিত। এরা শামুক খেতে ভালোবাসে। শামুক পেলে ঠোঁট দিয়ে শামুকের খোল ভাঙে, তারপর ওপরে তুলে আকাশের দিকে মুখ করে গিলে ফেলে। এজন্য এদের নাম শামুকখোল। তবে এরা শুধু শামুকই খায় না, খাল-বিলের ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছ, আর ফসলের মাঠের পোকামাকড় খেয়ে জীবন বাঁচায়। নিরাপদ আশ্রয়ে প্রজননও করছে পাখিগুলো। ফলে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যাও। ঝাঁক বেঁধে শামুকখোলের খাবার শিকার করা এবং দল বেঁধে উড়ে চলা এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় এ পাখিটির ২০ বছর ধরে এ এলাকায় বিচরণ মানুষকেও মুগ্ধ করছে। ফলে স্থানীয়রা এর অবাধ বিচরণে সচেতন রয়েছেন। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির শামুকখোল পাখি রয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাদা বর্ণের শামুকখোল। শুধু পিঠ ও ডানায় রয়েছে কালো অংশ। অন্য প্রজাতিটি আফ্রিকার বেশির ভাগ অঞ্চলের পাখি। এরা পুরো কালো বর্ণের। মূলত শামুকখোল বড় আকারের জলচর পাখি। এদের ঠোঁট বড় ও পাশ খানিকটা চাপা। ঠোঁটের নিচের অংশ ওপরের দিকে বাঁকানো।
শামুকখোল দেখতে বকের মতো। তবে অনেক বড়। গায়ের রং ধূসরসাদা। তবে বাসা বাঁধার সময় শরীর একদম সাদা হয়ে যায়। লেজ ও পাখার শেষ ভাগ কালো।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে শামুকখোলের এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ক্রমেই কমছে। আবাসস্থল, খাবার ও নিরাপত্তা থাকলে এরা স্থায়ীভাবে বসবাস করে। কারমাইকেল কলেজের বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, ‘বড় শামুকখোল বেশি খাদ্য খায়। পাশাপাশি বসবাসের জন্য বেশ পুরনো লম্বা গাছ এদের প্রথম পছন্দ। তাই প্রাচীন গাছগুলোয় এরা বাসা বাঁধে। তবে পাখিটি অনেকটা দুর্লভ। একসময় বাংলাদেশের সব জায়গায় শামুকখোল দেখা গেলেও এখন নেই। আর শামুকের প্রতি আসক্তির কারণেই এখানে এরা শামুকভাঙা, শামুকখোর, শামুকখোল বা শামখোল নামে পরিচিতি পেয়েছে।’
সোনাখুলি গ্রামের পাখিপ্রেমী ফণিভূষণ রায় বলেন, ‘সকালের ঘুম ভাঙে পাখির ডাক আর ডানা ঝাপটানোয়। আমাদের বাড়ির সামনে পাকুড় গাছ রয়েছে সেখানে বাসা বেঁধেছে এ বিরল প্রজাতির শামুকখোল পাখি। পাখিগুলো মাঘ-জ্যৈষ্ঠে আসে আর কার্তিক-অগ্রহায়ণে চলে যায়।’ সেতুবন্ধন সংগঠনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ পাখি প্রায় বিলুপ্ত। খুবই কম দেখা মেলে এদের। তাই এ পাখির যত্নসহ সার্বিক বিষয় দেখাশোনার জন্য আমরা সচেতনতাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি। যে কোনো পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ মানুষের সব ক্ষেত্রে উপকার করে। তাই শুধু শামুকখোলই নয়, সবুজ প্রকৃতিতে বিচরণকারী সব পাখিরই অভয়ারণ্য থাকা উচিত।’