খোকন কুমার রায়:
জাতি হিসেবে আমরা বড়ই বিচিত্র এবং চরিত্র বোঝা খুবই মুশকিল। কার যে কী ধান্ধা, কার যে কী মতলব, ষড়যন্ত্র- বোঝা খুবই কঠিন। ন্যায় নিষ্ঠাবান, দায়িত্বপরায়ণ ও সচেতন মানুষের খুবই অভাব আমাদের সমাজে। আমরাই আইন ভাঙ্গি, খাবারে ভেজাল দিই, নদীনালা, খালবিল, যা পাই সুযোগ বুঝে দখল করি, ব্যক্তিস্বার্থ অনেকেই বড় করে দেখি, সুযোগ পেলেই দুর্নীতির চেষ্টা করি, পরিবেশ দূষণ করি, ধর্মান্ধ হয়ে অনিষ্ট করি, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করি আর কিছু পেলেই সমালোচনা করি, দোষ চাপিয়ে দিই, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা চাই কানাডা, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি উন্নত দেশের সুযোগ-সুবিধা আর কথায় কথায় ঐসব দেশের সাথে নিজেদের তুলনা করি। কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করি না, আমাদের সেই যোগ্যতা আছে কিনা।
উন্নত বিশ্বের সকল প্রধানমন্ত্রীর সমন্বয়ে যদি “প্রধানমন্ত্রী পরিষদ” গঠন করে এ দেশ পরিচালনা করতে দেয়া হয় তাহলেও হয়তো তারা ব্যর্থ হবেন। কারণ আমাদের মানসিকতা ও বদঅভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে আগে। তবেই আসবে সুদিন।
এই বিচিত্র জাতিকে পরিচালিত করা এবং উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। যেখানে দায়িত্ব দেবার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও উপযুক্ত লোক খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন বিষয় যা দায়িত্ব দেবার পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে বোধ করি বোঝা যায়।
অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি অনেক দায়িত্বশীল লোককে বিশ্বাস এবং আস্থার অমর্যাদা করতে।
রাজনীতি যেখানে পেশা এবং ব্যক্তিবিশেষের সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার, সেখানে আমরা কিভাবে ভালো কিছু আশা করতে পারি?
এ জাতিকে সবচেয়ে ভালোভাবে চেনা যায় বড়সড় দুর্যোগের সময়, বিপর্যয়ের সময়। বর্তমানে আমরা এমন একটি দুর্যোগময় পরিস্থিতি পার করছি যখন সময় এসেছে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করার। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? সরকারি বিভিন্ন বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সুহৃদ ব্যক্তিবর্গ সংকট মোকাবিলায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের সুধী সমাজ যাদের বড় বড় কথা আমরা সব সময় শুনে এসেছি তাদের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
এমনকি বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের জনহিতকর কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করিনি এবং এতে খুবই আশ্চর্য হয়েছি। বর্তমানে এদের অবস্থান শেরপুরের মহান ভিক্ষুক জনাব নাজিম উদ্দিনের চেয়েও নীচে, যিনি ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা জনকল্যাণে দান করেছেন।
আসলে দুঃসময়ে বন্ধু চেনা যায়, শুভাকাঙ্খী চেনা যায়। সুবিধাবাদীরা সব কিছু সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে।
কিন্তু একজন আছেন যিঁনি সব সময় বাংলার দুঃখী মানুষের পাশে থেকে সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করছেন, সকল দুঃসময়ে, দুর্যোগে যাঁর দৃষ্টি শুধু মানুষের সেবা ও কল্যাণের দিকে রয়েছে, যাঁর সময় অতিবাহিত হয় গণমানুষের সুচিন্তায়; দুষ্ট বলয়ে থেকেও যিঁনি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অবিরাম, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা- আমাদের আশা, ভরসা ও সুখ-শান্তির প্রতীক। যিঁনি এই বিচিত্র জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু.কম।