স্বাস্থ্য

সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে নতুন নতুন ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৬০ লাখ ডায়াবেটিক রোগী রয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম স্থানে। বর্তমান বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ দখল করে নেবে ৭ম স্থান। উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৃদ্ধির হার বেশি। 

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি জানায়,  সারা বিশ্বে ডায়াবেটিক রোগী বাড়ছে। ডায়াবেটিস আজ পৃথিবীব্যাপী মহামারি। উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৃদ্ধির হার বেশি।  ২০০৩ সালে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিক রোগী ছিল ১৯ কোটি।২০৩০ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০৩ সালে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০ লাখ।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে  নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। এ ব্যাপারে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের (বাডাস) গৃহীত বহুমুখী কর্মসূচীর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি ধূমকেতু ডটকমকে  বলেন, বর্তমানে ৫৬টি জেলায় ৫৭টি অধিভুক্ত সমিতি রয়েছে। বাকি ৮টি জেলাতেও অধিভুক্ত জেলাতেও অধিভুক্ত সমিতি গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডায়াবেটিস সেবার পরিধি বাড়াতে অধিভুক্ত সমিতির পাশাপাশি অধিভুক্ত সমিতির অধীনে উপজেলা পর্যায়ে সহ-অধিভুক্ত সমিতি দেয়ার ব্যাপারেও আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি।

এক্রিডিটেড ফিজিশিয়ানদের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ে এক্রিডিটেড ফিজিশিয়ানদের মাধ্যমেও ডায়াবেটিস সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রোগীকে স্বনির্ভর করতে পারলে রোগীদের চিকিৎসকের প্রতি নির্ভরশীলতা কমে আসবে। রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্থ্য জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। কাজেই প্রতিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারে হেলথ এডুকেটর থাকা আবশ্যক।

হেলথ এডুকেটর ছাড়া যথাযথ ডায়াবেটিস সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য ইতোমধ্যে বারডেম, এনএইচএন এবং এইচসিডিপি’র বিভিন্ন কেন্দ্রে হেলথ এডুকেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অধিভুক্ত সমিতিগুলোতেও হেলথ এডুকেটরদের মাধ্যমে ডায়াবেটিক রোগীদের স্বনির্ভর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্ব ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইতোমধ্যে শতাধিক ডায়াবেটিস এডুকেটর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, জীবনযাপন পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন ও নগরায়নের কারণে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এনার্জিবহুল ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ইত্যাদি কারণে অনেকের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আর এসব কারণে শিশু-কিশোররাও আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে। এ অবস্থায় বাডাস সারাদেশে ডায়াবেটিস সেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও ব্যাপক কর্মসূচী নিয়েছে।

প্রাথমিক প্রতিরোধ এবং জাতীয় ডায়াবেটিক নীতিমালা সম্পর্কে ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাডাস বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি বাডাস করপোরেটভিত্তিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচীর অধীনে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বল্প মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়া হবে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে যাতে প্রতিটি বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেয়া উচিত। স্কুল কলেজে খোলা মাঠ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এককভাবে না পারলেও কয়েকটি স্কুল বা কলেজ যাতে সম্মিলিতভাবে একটি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে সে ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। টিভি-রেডিও-সংবাদপত্রে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বা শ্লোগান প্রচারের ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকাভিত্তিক ওয়াকিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব ইত্যাদি গড়ে তোলা উচিত। গৃহায়ন কর্মসূচীর অনুমতি দেয়ার সময় হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা ও খেলাধুলার জন্য কিছুটা জায়গা রাখার বিধান রাখতে হবে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে (যেমন মসজিদে খুতবার সময়) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বক্তৃতা করার ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর মোবাইল অপারেটররা যাতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক সংক্ষিপ্ত বার্তা (এসএমএস) পাঠাতে অন্তত ৩০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *