ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় অচিরেই বাংলায় দেওয়া হবে, সেজন্য কাজ চলছে। আজ রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলায় দেওয়া হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি অনুবাদ সেল গঠন করেছি। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।”
বাংলায় রায় দেওয়ার জন্য গত ডিসেম্বরে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে সুপ্রিম কোর্টের সব রায় ইংরেজি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় রূপান্তরিত হচ্ছে। রূপান্তর কাজ শেষ হলে আমরা আরও গুছিয়ে নেব।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন।
উচ্চ আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭’ রয়েছে; সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালতসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
ওই আইনের তৃতীয় ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের সওয়াল জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।
সরকার ও প্রশাসনের সব দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি গাড়ির নম্বরপ্লেট, সাইনবোর্ড, নামফলক ও টেলিভিশনে প্রচারিত সব বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে আদেশ এসেছে একাধিকবার। রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বা বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে রুলও জারি হয়েছে। তবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার উদ্যোগ উচ্চ আদালতেই গতি পায়নি।
আদালতের সব কার্যক্রমে বাংলা ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে কয়েক বছর আগে সংসদে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন একজন সাংসদ। পরে তা আর এগোয়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘরে দেড় শতাব্দী আগে বাংলায় দেওয়া একটি রায় রয়েছে, যে রায়ের প্যাডের লোগো ফার্সিতে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন বলে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন খায়রুল হক।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিচারকদের বাংলায় রায় লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। জাতীয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরও তিনি উচ্চ আদালতের কাজে বাংলা ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন, সেজন্য মানসিকতার পরিবর্তনের কথাও বলেছেন।
গতবছর একুশে ফেব্রুয়ারির আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আদালতের রায় লেখার সময় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারে জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, আদালতের রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। সেই রায়ে কি বলা হল তা বুঝতে অনেক বিচারপ্রার্থীকে নির্ভর করতে হয় আইনজীবীর ওপর। আমি বলব, আদালতের রায়টা যদি কেউ ইংরেজিতে লিখতে চান লিখতে পারেন। কিন্তু একটা শর্ত থাকবে, এটা বাংলা ভাষায় প্রচার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং যিনি রায় পাবেন তিনি যেন পড়ে তা জানতে পারেন।
আদালতের রায় বাংলায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা বিভিন্ন আইনি পরিভাষা, যেগুলোর যথাযথ প্রতিশব্দ বাংলায় তৈরি হয়নি। সেজন্য বিচারকরা এমন কোনো অনুবাদ যন্ত্র চাইছিলেন, যার মাধ্যমে ইংরেজিতে রায় বললে তা বাংলায় রূপান্তর হয়ে যাবে।
শেষ পর্যন্ত গতবছর ডিসেম্বরে সে রকম একটি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ‘আমার ভাষা’ নামের ওই সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়।
সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে একস্টেপ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া, যাদের মূল ‘অনুবাদ’ সফটওয়্যারটি ভারতে একইভাবে ইংরেজি থেকে বাংলাসহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অনুবাদ সফটওয়্যারটিকে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে এসইউভিএএস (সুপ্রিম কোর্ট বিধিক অনুবাদ সফটওয়্যার) হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।