ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: চৈত্রের ভরদুপুরের মতোই গরমের তুলনাটা টানা যেতে পারে কেবল। তার পরও ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রির এই গরম সত্যিই বড্ড অস্বস্তির। তবে মরুর এই দুপুরগুলোর সঙ্গে এতদিনে কিছুটা মানিয়ে নিয়েছেনও মাহমুদউল্লাহরা। এবার পরীক্ষা শারজাহর উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার।
কেননা এই মাঠে এর আগে দেশের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেই রিয়াদদের কারোরই। এদিন তাই মাঠে এসেই প্রথমে উইকেটের কাছে এসে কৌতূহলী চোখে বাইশ গজের ভাষা পড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন অধিনায়ক। ওমানে প্রথম পর্বে শুরুর ম্যাচে ধাক্কা খেয়ে মাঠের বাইরের যে ‘গরম’ সহ্য করতে হয়েছিল রিয়াদদের, এবার অন্তত সুপার টুয়েলভে সেই ‘গরম’ দিয়ে যাত্রা শুরু করার পক্ষে নন দলের কেউই। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের স্বপ্নিল অভিযাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে চান টাইগাররা।
গতকালই কোচ রাসেল ডমিঙ্গো টি২০ ফরম্যাটের সেই সনাতনী কথাটিই মনে করিয়ে দিয়েছেন- ‘এই ফরম্যাটে ফেভারিট বলে কিছু নেই, যে কেউ যে কোনো দিন, যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে।’
এই ‘যে কোনো দিন’টিই আজ নিজেদের করে নিতে চাইছেন রিয়াদরা। এমনিতে দেশ থেকে করে আসা হোমওয়ার্কে এবারের বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের তালিকায় শ্রীলঙ্কা কখনোই ছিল না। প্রথম পর্বে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে বাংলাদেশকে কাল খেলতে হতো নামিবিয়ার সঙ্গে। অবশ্য ব্যাপারটিকে অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে। লঙ্কার সঙ্গে কিছুদিন আগেই তো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলেন রিয়াদরা। হতে পারে সে ম্যাচটিতে চার উইকেটের হার ছিল; কিন্তু সেখানে লঙ্কান বোলারদের মুখোমুখি তো হওয়া গিয়েছিল। সাকিব-মুস্তাফিজ ছাড়া ওই ম্যাচটিতে ১৪৭ তুলেছিল বাংলাদেশ। ২৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৪ করেছিলেন সৌম্য সরকার। যদিও আজকের একাদশে তার থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
মূলত পাওয়ার প্লের ব্যাটিং নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে গোটা টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম ম্যাচে সৌম্য রান না পাওয়ায় নাঈম শেখকে খেলানো হয়। ওমানের সঙ্গে নাঈম রান পেলেও পাওয়ার প্লেতে তার ‘ডট’ খেলা নিয়ে কথা উঠেছে। লিটন দাসের ওপর অনেক প্রত্যাশা এবারের বিশ্বকাপে। যদিও প্রথম পর্বে তার কিছুই পূরণ করতে পারেননি। ডান আর বাঁহাতি কম্বিনেশন রাখতে গিয়ে সাকিব কখনও তিনে, কখনও বা চারে ব্যাটিং করছেন। এই সাকিবই দলের জন্য বড় পুঁজির ভিত তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছেন। লঙ্কানদের কাছেও যে আজ সাকিবই বাড়তি নজরে থাকবেন, সে কথা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন দাসুন সানাকা। মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাকিব আর মুস্তাফিজকে সতর্কতার সঙ্গে খেলতে হবে তাদের। দু’জনের আইপিএল খেলাটাকেই বাড়তি অ্যাডভান্টেজ বলছেন সানাকা। ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে খুব ভালো একটা ম্যাচ আশা করছি। কোয়ালিফায়ার থেকে তারা খুব ভালোভাবেই উঠেছে। আমার বিশ্বাস, একটা জমজমাট ম্যাচ হতে যাচ্ছে। শারজাহর পিচ নিয়ে বেশি ভাবছি না। আমরা আমাদের শক্তির জায়গা নিয়ে খেলব। আমরা জানি সাকিব, ফিজ আর মাহমুদউল্লাহরা কতটা ফর্মে আছে।’ এমনিতে দু’দলের মোট ১১ ম্যাচের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় চারটিতে।
তবে গত টি২০ বিশ্বকাপের পর থেকে অনেক কিছুই বদলেছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উত্থানের গল্পটা যেভাবে এগিয়েছে, ঠিক সেভাবেই পিছিয়েছে লঙ্কার গল্পটি। একটি পরিসংখ্যান দিলেই ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত টি২০ বিশ্বকাপে মোট ২৫টি ম্যাচ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। যা অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি। সেখানে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র সাতটি। যার মধ্যে বাছাই পর্ব বাদ দিলে মাত্র একটি (২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে)। ছয়টি টি২০ বিশ্বকাপের তিনটিতেই ফাইনাল খেলেছে শ্রীলঙ্কা। এসব রেকর্ডই বছর পাঁচেক আগে পর্যন্ত। তখন মাহেলা-সাঙ্গাকারাদের যুগ ছিল। এরপর গত পাঁচ বছরে মোট ১২টি টি২০ সিরিজের মধ্যে শ্রীলঙ্কা জিতেছে মাত্র দুটিতে। সেখানে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে আসার আগেই জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জিতেছে। যদিও শেষ দুটি সিরিজে মিরপুরের পিচ নিয়ে এবং প্রতিপক্ষের ‘বি’ দল নিয়ে কথা উঠেছে, তার পরও জয়ের ‘আত্মবিশ্বাস’ নিয়েই তো এসেছেন রিয়াদরা। যদিও এখানে আসার পর ব্যাটারদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেরাটা এখন আসেনি। মুশফিক, সোহান, আফিফরা এখনও বিস্ম্ফোরক ব্যাটিং করতে পারেননি। ঠিক এখানেই উন্নতি করতে হবে আজ। প্রথম পর্বের যা কিছু অর্জন তার অনেকটাই ছিল শুধু সাকিবকেন্দ্রিক। তবে সুপার লিগে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই বাকিদেরও জ্বলে উঠতে হবে। শারজাহর বাউন্ডারির আকার মাসকটের চেয়ে কম, এই সুবিধা কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। যেহেতু এই পর্বের সব ম্যাচ দুপুরে, আপাতত তাই শিশির নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না রিয়াদদের।
আরও একটি চিন্তা আজ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে তাদের। আর সেটা হলো, লঙ্কার রহস্যময় স্পিনারখ্যাত মাহেশ তিকসানার অনুপস্থিতি। প্রথম পর্বে দারুণ খেলেছেন মাহেশ। তবে শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে পিঠে হালকা চোট পাওয়ায় আজ আর বাংলাদেশের বিপক্ষে নেই তিনি। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে লঙ্কানরা তাদের বোলিং দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছেন। নামিবিয়াকে ৯৬, আয়ারল্যান্ডকে ১০১ আর নেদারল্যান্ডসকে ৪৪ রানে অলআউট করেছে তারা। লঙ্কানদের হাতে টি২০-র দুই নম্বর র্যাঙ্কিংয়ের বোলার হাসারাঙ্গা রয়েছেন। ঘণ্টায় ১৫০ কিলো গতির পেসার দুশমন্ত চামিরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলিংয়ে লঙ্কানরা বেশি শক্তিশালী। আর যেখানে রিয়াদের হাতে সাকিব আল হাসান রয়েছেন, সেখানে লঙ্কানদের চেয়ে যে কোনো তুলনায় এগিয়েই থাকবে প্রিয় বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন: