স্বাস্থ্য

ধূমকেতু নিয়ে এলো করোনার আরেকটি ভ্যাকসিন

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি নোভাভ্যাক্স, করোনার যে টিকাটি তৈরি করেছে, প্রথম ধাপের পরীক্ষায় টিকাটি নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। টিকাটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সক্ষমতা দেখিয়েছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ১৩১ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর মঙ্গলবার এর ফল প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। সিএনএনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।

নোভাভ্যাক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরীক্ষার প্রথম ধাপে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। সাধারণত কোভিড-১৯ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে যে পরিমাণ নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, এর চেয়ে চার গুণ বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে নোভাভ্যাক্সের টিকা। নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

নোভাভ্যাক্সের প্রেসিডেন্ট ড. গ্রেগরি গ্লেন বলেছেন, ‘খুব ভালো সংবাদ। এটা দারুণ আশাব্যঞ্জক।’

নোভাভ্যাক্সের টিকাটি টি-সেল থেকে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে, যা মূলত বিশেষ প্রতিরোধী কোষ হিসেবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষায় টি-সেল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

গবেষণাসংক্রান্ত তথ্য চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। নোভাভ্যাক্সের বাইরে কোনো বিজ্ঞানী এখনো এর পর্যালোচনা করেননি।

প্রথম ধাপের পরীক্ষার সময় স্বেচ্ছাসেবীদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিরোধী সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য অনেককে অ্যাডজুভান্ট নামের উপাদান দেওয়া হয়। পরীক্ষার সময় পাঁচজনের শরীরে মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও হালকা জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গড়ে দুই দিন পর্যন্ত থাকে।

প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল জানানোর সময় প্রাণীর ওপর টিকা পরীক্ষার ফলও জানিয়েছে নোভাভ্যাক্স। ১২টি বানরের শরীরে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পর সেগুলোকে ভাইরাস সংক্রমিত করা হয়। এতে দেখা যায় ১১টি বানরের শরীরে সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নেই। অল্প ডোজ পাওয়া একটি বানরের ফুসফুসে সংক্রমণের সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও তা মাত্র দুই দিন স্থায়ী হয়।

নোভাভ্যাক্স ছাড়াও আরও দুটি মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রথম ধাপের টিকার ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মডার্না ও ফাইজার। তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলও ইতিবাচক ছিল। গত সপ্তাহ থেকে মডার্না ও ফাইজার ৩০ হাজার মানুষের ওপর তাদের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে।

জরুরি ভিত্তিতে টিকা তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গৃহীত অপারেশন র‌্যাপ স্পিড কর্মসূচির অধীনে টিকা উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নোভাভ্যাক্স, মডার্না, ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও গ্লাসোস্মিথক্লাইন। এর বাইরে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র অর্থ বিনিয়োগ করলেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

অপারেশন র‌্যাপ স্পিড কর্মসূচির প্রধান মনসেফ স্লাউয়ি বলেন, তিনি আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি নাগাদ উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত মার্কিন নাগরিকদের জন্য টিকা সহজলভ্য থাকবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক টিকা কর্মসূচির আওতায় থাকবে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্পপরিচিত প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য পেয়েছে। তাদের পরীক্ষার ফল ইতিবাচক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *