আন্তর্জাতিকখেলাধুলাসর্বশেষ

সিরিজ জয়ের সাথে সুপার লীগের শীর্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

সিরিজ জয়ের সাথে সুপার লীগের শীর্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

এবার সিরিজ জয়ের সাথে সুপার লীগের শীর্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ইদানীং তামিম ইকবাল যা চাচ্ছেন, পাচ্ছেন তার চেয়ে বেশিই।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে আশা ছেড়ে দিয়েও পেয়েছেন অবিশ্বাস্য এক জয়। পরের ম্যাচেও এরই ধারাবাহিকতা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সময় স্কোর ২৬০-এর আশপাশেই দেখতে চান বলে জানিয়েছিলেন।

কিন্তু ইনিংস শেষ হতে হতে তাঁর ভাবনার সীমাও পেরিয়ে যায়।
অবশ্য ততক্ষণে ৩০৬ নয়, আরো বেশি রানই স্কোরবোর্ডে জমা হওয়ার কথা ছিল। শেষ দিকে মাহমুদ উল্লাহ ও আগের ম্যাচে জয়ের অন্যতম নায়ক আফিফ হোসেন মিলে লিটন কুমার দাসের তুলে দিয়ে যাওয়া ঝোড়ো গতি অব্যাহত রাখতে পারেননি। শেষ ৪ ওভারে তাই বাউন্ডারি আসে মাত্র একটিই, রানও উঠে কেবল ২২!

অথচ শুরুর জড়তা কাটিয়ে, শট খেলার সংযমে টিকে থেকে সিঙ্গলস-ডাবলসেই বেশি মনোযোগী লিটন পরে ব্যাটিংয়ের এমন এক অনুপম প্রদর্শনী করেন যে রানের বল্গা হরিণই ছোটে যেন! কিছুটা ধীরে ফিফটি করার পর সেখান থেকে দ্রুততায়ই পৌঁছে যান নিজের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতেও।

সেঞ্চুরি করেই থামেন না, বরং দেখা দেন আরো বিধ্বংসী মেজাজেও। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তাঁর জুটিও এমন জমে যায় যে তৃতীয় উইকেটে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম দুই শ ছাড়ানো পার্টনারশিপও দেখে ফেলে বাংলাদেশ।

তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দশম ওয়ানডেতে এই প্রথম তিন শর বেশি রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা। এর আগে কখনোই এত রান তাড়া করে না জেতা সফরকারীদের তাই জিততে হলে রেকর্ডই গড়তে হতো। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের আরেকটি সম্মিলিত পারফরম্যান্স লক্ষ্যের অনেক পেছনে থাকতেই থামায় আফগানদের।

তাদের ২১৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে পাওয়া ৮৮ রানের জয়টি আবার তামিমদের জন্য ‘একের ভেতর দুই’ও। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলাদেশ সিরিজ যেমন পকেটে পুরে ফেলল, তেমনি আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষারোহণও করল। এই ম্যাচের আগে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের (৯৫ পয়েন্ট) ঠিক পেছনেই ছিল তারা। লিটনের সেঞ্চুরিময় দিনে পাওয়া অনায়াস জয়ে সুপার লিগের পয়েন্টও তিন অঙ্কে নিয়ে গেল বাংলাদেশ।

এবার তামিম (১২) দুই অঙ্কে গেলেন কিন্তু আগের ম্যাচের মতোই আফগান বাঁহাতি পেসার ফজল হক ফারুকির শিকার। তিনে নামা সাকিব আল হাসানও (২০) উইকেটে সেট হওয়ার পর রশিদ খানের বলে এলবিডাব্লিউ।

এরপরই লিটন-মুশফিকের ব্যাটে হতাশার দীর্ঘ প্রহর গোনার শুরু সফরকারীদের। প্রথমেই তাঁরা রয়েসয়ে খেলতে থাকেন, পরে গতি বাড়ান। এ কারণেই ডাবল সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের প্রথম ১০০ রান করতে লেগে যায় ১০৮ বল। অথচ পরের ১০০ রান করতে মোটে ৭৬ বল ব্যয় করেন তাঁরা।

লিটনের ইনিংসেও ফিফটির আগে এবং পরে এমনই বৈপরীত্য। ৬৫ বলে করেন ফিফটি। সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে খেলেন মাত্র ৪২ বল। ১০৭ বলে তিন অঙ্ক ছোঁয়া লিটন শেষ পর্যন্ত ১২৬ বলে করে যান ১৩৬ রান। যে ইনিংসে ১৬টি চারের সঙ্গে মারা দুটি ছক্কাই সেঞ্চুরির পর। দুটোই ফারুকিকে, প্রথমটিতে পুল করে বল পাঠান জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলায়ও।

ফারুকির মতোই আরেক বাঁহাতি পেসার ফরিদ আহমেদ মালিকের স্লোয়ার শর্ট বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে লিটন বিদায় নেওয়ার সময় সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল মুশফিকেরও (৮৬)। কিন্তু পরের বলেই থার্ডম্যানে ক্যাচ হন তিনিও। ৩১ ওভার স্থায়ী জুটিতে অবশ্য সুযোগ দিয়েছিলেন দুজনেই। দুটো সুযোগই মুজিব-উর রহমানের তিন ওভারের মধ্যে।

৬৯ রানে থাকা মুশফিককে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেন চোটে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজের জায়গায় উইকেটকিপিং করা ইকরাম আলী খিল। আর খোদ আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি কাভারে সহজ ক্যাচ ফেলেন ৮৭ রানে থাকা লিটনের।

এভাবে জীবন পাওয়া ওপেনার সুযোগ কাজেও লাগান। রশিদকে ইনসাইড আউট শটে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে।

যা একটি ক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে গেছে সবার ওপরেও। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে পাঁচটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করতে সবচেয়ে কম ৯৩ ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব। সমানসংখ্যক সেঞ্চুরি করতে লিটনের লাগল মাত্র ৪৯ ইনিংসই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *