ধূমকেতু প্রতিবেদক: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আ.হ.ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। এ খবরে লোটাস কামালের নিজ নির্বাচনী এলাকার (কুমিল্লা-১০ সদর দক্ষিণ, লালমাই-নাঙ্গলকোট) দলীয় নেতাকর্মীসহ কুমিল্লার সর্বমহল উচ্ছ্বসিত।
অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের বর্ণাঢ্য জীবন
আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে লোটাস কামাল নামেই দেশ-বিদেশে তার বেশ পরিচিতি। বিশিষ্ট ক্রিকেটানুরাগী যিনি দু’দশকের অধিক আবাহনী ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। দেশের একজন খ্যাতনামা চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা জেলার নবগঠিত লালমাই উপজেলা বাগমারা ইউনিয়নের দুতিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম বাবরু মিয়া, মা মরহুমা সায়রা বেগম।
লোটাস কামাল স্থানীয় দত্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি, পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৪-১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টেন্সি ও আইন বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। লোটাস কামাল ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানে (পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান) চার্টার্ড একাউনটেন্সি (সিএ) পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি ছাত্রজীবন থেকেই। কলেজ জীবনের পুরো সময়ই তিনি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-৯ (পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে কুমিল্লা-১০) নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি পাবলিক একাউন্টস কমিটির সদস্য, বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, যাকাত বোর্ডের সদস্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন।
২০০৬ সালের ১২ মে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-১০ নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ এই সময়কালে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে ৪ লক্ষাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। লোটাস কামাল ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে লোটাস কামালের রয়েছে বেশ পরিচিতি। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময় ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। তিনি গত ৩০ বছরেরও অধিক সময় ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এর উন্নয়নে প্রশংসনীয় অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
২০১৪ সালের ১লা জুলাই থেকে তিনি আইসিসির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি আইসিসির সহ-সভাপতি, Audit Committee সভাপতি এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পারিবারিক জীবনে ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার স্ত্রী কাশমেরী কামাল একজন সফল ব্যবসায়ী। দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে কাশফী কামাল স্বপরিবারে প্রবাসী ও ছোট মেয়ে নাফিসা কামাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপার্সন।