লেখালেখি

কবিতা: সাহেব ও মোসাহেব

– কাজী নজরুল ইসলাম :

সাহেব কহেন, “চমৎকার! সে চমৎকার!”

মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে!

হুজুরের মতে অমত কার?”

সাহেব কহেন, “কী চমৎকার,

বলতেই দাও, আহা হা!”

মোসাহেব বলে, “হুজুরের কথা শুনেই বুঝেছি,

বাহাহা বাহাহা বাহাহা!”

সাহেব কহেন, “কথাটা কি জান? সেদিন -”

মোসাহেব বলে, “জানি না আবার?

ঐ যে, কি বলে, যেদিন -”

সাহেব কহেন, “সেদিন বিকেলে

বৃষ্টিটা ছিল স্বল্প।”

মোসাহেব বলে, “আহা হা, শুনেছ?

কিবা অপরুপ গল্প!”

সাহেব কহেন, “আরে ম’লো! আগে

বলতেই দাও গোড়াটা!”

মোসাহেব বলে, “আহা-হা গোড়াটা! হুজুরের গোড়া!

এই, চুপ, চুপ ছোঁড়াটা!”

সাহেব কহেন, “কি বলছিলাম,

গোলমালে গেল গুলায়ে!”

মোসাহেব বলে, “হুজুরের মাথা! গুলাতেই হবে।

দিব কি হস্ত বুলায়ে?”

সাহেব কহেন, “শোনো না! সেদিন

সূর্য্য উঠেছে সকালে!”

মোসাহেব বলে, “সকালে সূর্য্য? আমরা কিন্তু

দেখি না কাঁদিলে কোঁকালে!”

সাহেব কহেন, “ভাবিলাম, যাই,

আসি খানিকটা বেড়ায়ে,”

মোসাহেব বলে, “অমন সকাল! যাবে কোথা বাবা,

হুজুরের চোখ এড়ায়ে!”

সাহেব কহেন, “হ’ল না বেড়ানো,

ঘরেই রহিনু বসিয়া!”

মোসাহেব বলে, “আগেই বলেছি! হুজুর কি চাষা,

বেড়াবেন হাল চষিয়া?”

সাহেব কহেন, “বসিয়া বসিয়া

পড়েছি কখন ঝিমায়ে!”

মোসাহেব বলে, “এই চুপ সব! হুজুর ঝিমান!

পাখা কর, ডাক নিমাইএ”

সাহেব কহেন, “ঝিমাইনি, কই

এই ত জেগেই রয়েছি!”

মোসাহেব বলে, “হুজুর জেগেই রয়েছেন, তা

আগেই সবারে কয়েছি!”

সাহেব কহেন, “জাগিয়া দেখিনু, জুটিয়াছে যত

হনুমান আর অপদেব!”

“হুজুরের চোখ, যাবে কোথা বাবা?”

প্রণামিয়া কয় মোসাহেব।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *