ডেস্ক নিউজ, সুখবর ডটকম: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ চীনা পুলিশের ষড়যন্ত্র ফাঁস করেছে। দেখা যাচ্ছে, চীনা পুলিশ অন্যান্য দেশে চীনা পলাতকদের সাহায্য করতে এবং অতিরিক্ত কূটনৈতিক তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করেছিল।

মানবাধিকার গোষ্ঠী, সেফগার্ড ডিফেন্ডারস, ৫৩টি দেশে কূটনৈতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে কমপক্ষে ১০২টি এ জাতীয় স্টেশনের উপস্থিতির কথা জানিয়েছে।

অভিযোগ করা হয়, চীনা পুলিশ পশ্চিমা দেশগুলোতে মধ্যস্ততাকারীদের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে। চীনা সরকার যেসব নাগরিকদের চীনে ফেরত আনতে চাইছে তাদের শনাক্ত করাই এর প্রধান কাজ। চীনে বসবাসরত তাদের আত্মীয় পরিজনদের উপর চাপ প্রয়োগ করা থেকে শুরু করে তাদের হুমকি প্রদানের জন্য গুন্ডা নিয়োগ করার মতো বিভিন্ন কাজের সাথে এসব স্টেশন যুক্ত। এ উদ্যোগ কোয়ানফান নামে পরিচিত।

২০১২ সালে শি জিনপিং ক্ষমতা গ্রহণের পর কোয়ানফানের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শির কার্যক্রমের মাধ্যমে চীনা পুলিশ বাইরের দেশের দিকে মনোনিবেশ করেছে। হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে স্টেশনগুলো। তবে এ কাজের মাধ্যমে চীন সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব।

২০১৬ সাল থেকে চীনের জিয়াংসু, ঝেজিয়াং এবং ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে সার্ভিস স্টেশন পরিচালনা করে আসছে চীন।

২০১৪ সাল থেকে অপারেশন ফক্স হান্টের নামে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে চীন। এর অপর নাম অপারেশন স্কাই নেট। এর মাধ্যমে আর্থিক অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হয়।

ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে চীনা সরকার বিভিন্ন দেশে এই পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২১ টি দেশে এসব পুলিশ সার্ভিস স্টেশন শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ফুজিয়ানের রাজধানী ফুঝোতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।

এই স্টেশনগুলোর বৈধতা সম্পর্কে সন্দিহান পশ্চিমা বিশ্ব। চীনা কর্তৃপক্ষ এই স্টেশনগুলোর মাধ্যমে যে হুমকি এবং হয়রানিমূলক আচরণ করছে তা কোন ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারিভাবে অবশ্য এ স্টেশনগুলো পরিচালনাকারী চীনা প্রতিনিধিরা চীনা পুলিশকে সাহায্য করার বিষয়গুলো অস্বীকার করেছে। তবে অনেক পশ্চিমা দেশের দাবি হলো চীনা সরকার এই স্টেশনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের অবহিত করেনি, সুতরাং এদের কার্যক্রম রীতিমতো অবৈধ।

ইউরোপের বেলগ্রেড, মাদ্রিদ এবং প্যারিসের তিনটি স্টেশনে চীনা হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। গত বছর, জিয়াংসু শহরের নানটং পুলিশ জানায় তারা বিদেশে স্থাপিত স্টেশনগুলোর মাধ্যমে ৮০ জন সন্দেহভাজনকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

সন্দেহ করা হচ্ছে, এসব স্টেশনগুলোর মাধ্যমে চীনা পুলিশ চীনা প্রবাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে তারা জিজ্ঞাসাবাদেরও ব্যবস্থা করে।

এসব স্টেশনের মাধ্যমে উইঘুর এবং তিব্বতিদের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপরও নজর রেখে চলেছে চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের “দ্য চায়না থ্রেট” নামে একটি ওয়েব পেইজ রয়েছে। চীনা ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করা হয় এতে। এ পেইজের শীর্ষ খবরগুলোর একটি হলো চীনা বেলুনের ঘটনা, যা যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস করে ফেলে। আমেরিকান ভূখণ্ডে চীনা নজরদারির বিভিন্ন তথ্যও প্রকাশ করে ওয়েব পেইজটি।

এ নজরদারির অভিযোগে ২০২০ সাল থেকে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করেছে এফবিআই, যার বেশিরভাগই চীনা নাগরিক। এফবিআই পরিচালক, ক্রিস্টোফার ওয়ারি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেন চীনকে।

ওয়ারি বলেন, চীনা সরকার হুমকি, সহিংসতা এবং অপহরণের মতো বিভিন্ন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত। চীনে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চীন সরকার মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অপরাধমূলক সংগঠনের সাথে হাত মিলিয়েছে।

পশ্চিমারা বিষয়টিকে জনসমক্ষে আনার সাথে সাথে আশা করছে চীন সরকার এ বিষয়ে মুখ খুলবে এবং তাদের পুলিশকে এহেন কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। চীনে বসবাসরত আত্মীয় পরিজনদের কথা ভেবেই মূলত বিদেশে অবস্থানরত চীনা প্রবাসীরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পান।

চীন সম্ভবত ভেবেছিল এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলবে, কিন্তু এখন সব সত্য জনসমক্ষে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

এমএইচডি/ আই. কে. জে/

আরো পড়ুন:

কোকো দ্বীপে কি গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা করছে মায়ানমার?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *