নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদসহ অপশক্তির পুনরুত্থান রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক প্রচারের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিকল্প নেই, আবার জঙ্গিবাদী বিভিন্ন অপরাধের বিস্তার ঘটছে এসব প্ল্যাটফর্মেই। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি। মন্ত্রী এই চ্যালেঞ্জ সম্মিলিত উদ্যোগে মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী মঙ্গলবার ঢাকায়‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানের পুনরুত্থান : তরুণ সমাজের করণীয়’ শীর্ষক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেল-এর উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল, কলামিস্ট লীনা পারভীন, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক মারুফ রসুল, নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট আজম খান, নির্মূল কমিটির বগুড়া জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, নির্মূল কমিটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান মর্তুজা, কলকাতার আইনজীবী সালমান আখতার, ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগীয় সম্পাদক সমাজকর্মী তাপস দাস, নির্মূল কমিটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ এবং নির্মূল কমিটির মানিকগঞ্জ শাখার ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রিক্তা রিতু বক্তৃতা করেন।
নির্মূল কমিটির জঙ্গি ও মৌলবাদবিরোধী আলোচনার বিষয়গুলো অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রায় শতাধিক আইডি আমরা শনাক্ত করেছি যেগুলো বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের অবস্থান পরিচয়সহ বিস্তারিত আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকেও পাঠিয়েছি। তারা বিভিন্ন দেশবিরোধী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জঘন্য অপপ্রচারে লিপ্ত। আমরা নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছি এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।
প্রতিবেশি একটি দেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, পাকিস্তান অনবরত জঙ্গি রফতানি করে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদ পুনরুত্থান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে ও রাজনৈতিকভাবে অনলাইনের এই জঙ্গিবাদ কঠোরভাবে মোকাবেলা করার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, চেষ্টা করছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদী প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করার। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাথে সর্বদা যোগাযোগ করছি। আমরা যদি সকলে মিলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশকে জঙ্গিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। আশা রাখি, এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে নির্মূল কমিটির এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা একসময় বড় প্রচেষ্টায় পরিণত হয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত করবে।’ ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপশক্তির নানা অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে কম্পিউটারে বাংলা ভাষার জনক মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই দীর্ঘকালের। সেইসব অপশক্তি সোস্যাল মিডিয়াকে এখন তাদের অপতৎপরতার বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগেও কয়েক লাখ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতো। বাংলাদেশে এখন চার কোটি আশি লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করা খুবই সহজ। গত তিন বছর আগেও অনলাইন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনও প্রযুক্তি আমাদের ছিলো না। ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর প্রযুক্তি এখন সরকারের হাতে রয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে কোনও প্রযুক্তি এখনো আসেনি কিন্তু অতীতের তুলনায় ফেসবুকের সাথে আমাদের চমৎকার সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তা কাজে লাগিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।