স্বাস্থ্য

সাধারণ ছুটি শুধু রেড জোনে : ইয়েলো ও গ্রিন জোনে সীমিত অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে যে তিনটি জোনে ভাগ করা হচ্ছে, তার মধ্যে রেড জোনে (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত আদেশে এ কথা জানানো হয়েছে।

প্রথমে রেড জোনের পাশাপাশি ইয়েলো বা হলুদ (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকাতেও এই ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হয়।

আদেশে বলা হয়েছে, ‘রেড অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক বা অ-সামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বয়ত্তশাসিত বা বেসরকারি দপ্তরগুলো এবং রেড অঞ্চলে বসবাসকারী এসব দপ্তরের চাকরিজীবীরা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন।

ইয়েলো ও গ্রিন অঞ্চলে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এই সময়ে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না।

এছাড়াও গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে অবস্থিত অফিসগুলো ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেভাবেই চলবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন যে এলাকাটি লাল এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে, তখন থেকে ওই সব এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে।

হলুদ এবং সবুজ (নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকায় অফিসগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে চলবে। ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী, সন্তান সম্ভাব্য নারীরা কর্মস্থলে আসবেন না। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক ১২ দফা নির্দেশনা মানতে হবে। জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে করতে হবে।

আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুযায়ী এখতিয়ারভুক্ত কর্তৃপক্ষ (মূলত স্বাস্থ্য বিভাগ) লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। এর মধ্যে লাল এলাকায় চলাচল ও জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

তবে লাল এলাকার জন্য কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-ননকোভিড স্বাস্থ্য সেবা প্রটোকল, কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, চলাচল, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, দরিদ্র লোকদের জন্য সহায়তা দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি পরিচালনা জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে।

সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে সিটি করপোরেশন। আর সিটি করপোরেশনের বাইরে জেলা প্রশাসন সার্বিক সমন্বয় করবে।

বর্তমান নিষেধাজ্ঞা ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ল:

সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তা মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মানে হলো শর্ত সাপেক্ষে অফিসসহ অন্যান্য কার্যাবলী সীমিত পরিসরে চলবে।

এই সময়ে শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল এবং বিমান চলাচল করতে পারবে।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ( প্রয়োজনীয় কেনাবেচা, কমস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃত দেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।

নতুন আদেশে হাটবাজার ও দোকানপাট এবং শপিং মল বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের কর্মীরাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবেন।

ওষুধশিল্প, কৃষি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো, উৎপাদন ও রপ্তানি শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে।

এই সময় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে নির্দেশনা দেবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অবশ্য অনলাইনে বা দূরশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *