সর্বজনীন পেনশন তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার। পেনশন তহবিলে রোববার (২২ অক্টোবর) পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এখান থেকে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এ ঋণের বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে সুদ পাবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।
এ সময় পেনশন কর্মসূচির পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশন তহবিল জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ উৎসে বিনিয়োগ করবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ট্রেজারি বন্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একজন ব্যক্তি কত টাকা কত সময় পর্যন্ত জমা দিয়ে কী পরিমাণ পেনশন প্রাপ্য হবেন তার একটি সম্ভাব্য হিসাব দেখানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পেনশন স্কিমে প্রত্যাশা অনুযায়ী মানুষের অংশগ্রহণ কম হলেও লক্ষ্য পূরণ হবে। এ ধরনের কর্মসূচিতে কোনো দেশ ব্যর্থ হয়নি। তিনি বলেন, এ কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে সব জনগণকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে চায়।
গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন অংশ নেয়। কিন্তু পরবর্তী মাসে এতে যুক্ত হওয়া জনগণের সংখ্যা ২ হাজারেরও কম। এ ক্ষেত্রে আগ্রহে ভাটা পড়ার কারণ কী জানতে চাইলে, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যথাযথ প্রচার না হওয়া। দেশব্যাপী প্রচারের জন্য ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম সবে শুরু হয়েছে। এর আওতায় গ্রহকদের আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার চিকিৎসা ব্যয়ও এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, এ কার্যক্রম শুরুর আগেই বিধিমালা জারি করে কতদিন কত টাকা জমা দিলে কী পরিমাণ সম্ভাব্য পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে তা জানানো হয়েছে। তবে তখন ট্রেজারি বন্ডের বিনিয়োগ সুদহার আরও কম ধরা হয়। কিন্তু বিনিয়োগ করতে গিয়ে দেখা গেল, সুদহার ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পেনশনারদের প্রাপ্তি আরও কিছুটা বাড়বে।
অনুষ্ঠানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার– এমন এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কভিড আমাদের জন্য খুবই সমস্যা ছিল। এরপর একের পর এক যুদ্ধ শুরু হয়। সরকারের যেসব সুযোগ রয়েছে সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় সুদের হার নয়ছয় বেঁধে দেওয়া না হলে আজ ব্যাংকিং খাত খুঁজে পাওয়া যেত না।
জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে ভারত থেকে অনেক খাদ্যদ্রব্য আসত। এখন তেমন আসে না। আগে তারা দিতে পারত, এখন দিতে পারে না। আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে সরকার।