অভিমত

সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরাও যেন এগিয়ে আসেন: পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। কাঁপছে বাংলাদেশও। যদিও বাংলাদেশে সংক্রমণ এখনো কম, তবু ঘনবসতির এই দেশে পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। চারজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, দোকান-পাট, গণপরিবহন সব কিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ না থাকায় দিশেহারা নিম্ন ও সীমিত আয়ের লোকজন। চিকিৎসা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ধূমকেতুডটকম-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছি দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সিইও, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক, জনপ্রিয় নাট্য ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ‘ধূমকেতু’ এর নির্বাহী সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল জুয়েল।

নোভেল করোনা বা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির পাশাপাশি এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব কেমন হতে পারে জানতে চাইলে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই প্রশ্নটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে বাংলাদেশ বিগত অনেক সংকটের মতো আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সাথে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সরকার যেভাবে কাজ করছে সেখানে আমাদের পূর্ণ আস্থা রাখা দরকার, আস্থা রাখতে চাই। আমরা মনে করি আর্থ-সামাজিক যে ক্ষতিটা হবে, সেইসঙ্গে জীবননাশের ক্ষতিটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলার পর সামনের দিনগুলোতে একটি সুন্দর পরিকল্পনা নিতে হবে। এর ফলে বিগত দিনের মতো এই সংকট থেকে আমরা উত্তরণ করতে পারবো। পাশাপাশি এও বলি, যতটুকু গণমাধ্যমে দেখছি, শুনছি, খবর নিচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে আমাদের প্রস্তুতিটা নিতান্ত খারাপ নয়।’

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জনগণের বড় একটি অংশ খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ। দেশটি যদি একটি লক ডাউনের দিকে চলে যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে গেছে, সে ক্ষেত্রে এই মানুষদের বাঁচাতে সরকারের কী পদক্ষেপ থাকা উচিত বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কী পদক্ষেপ থাকা উচিত সেটা বলার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে কেবিনেট সেক্রেটারি মহোদয় আজ (২৩ মার্চ) যেভাবে বলেছেন তাতে মনে হলো যে সরকারের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সুনজর আছে। সরকার তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এ রকম কিছু ঘোষণা তিনি আজকে আমাদের দিয়েছেন। এ জন্য বলছিলাম, যে ব্যাপারটা নিয়ে আপনারা চিন্তিত, আমিও চিন্তিত, সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ, একেবারে বিত্তহীন মানুষ তারা যাতে বিপদগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে সরকার কিন্তু কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু ঢাকা শহর নয় চৌষট্টিটি জেলার বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি আমি আহ্বান জানাবো যারা বিত্তবান মানুষ, যাদের সামর্থ্য আছে তারা যে যেখান থেকে পারেন এই সকল শ্রমজীবী, বিত্তহীন মানুষদের জন্য যাতে কিছু করেন। তাদের জন্য আমাদেরও কর্তব্য আছে। শুধুমাত্র সরকারের করণীয়র দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না।’

এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির শেষটা কোথায় হতে পারে বলে মনে করেন? ধূমকেতু এর এমন প্রশ্নের জবাবে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘এমন পরিস্থিতি আমাদের ভূখণ্ডে এর আগে হয়নি তা নয়। হয়তো এবারকার ধরনটা আলাদা। আপনি দেখেন, এর আগে সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ে দশ লক্ষ লোক মারা গেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় তিরিশ লক্ষ মানুষ মারা গেছেন, তারপর সিডর, আইলা- এ জাতীয় বিভিন্ন দুর্যোগে নানা সংকটময় সময় আমরা পার করে এসেছি। এবারের সংকটটা একেবারে ভিন্ন ধরনের। এটা বৈশ্বিক সংকট। এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের হেরে যাওয়ার মতো মানসিকতা থাকা উচিত নয়। আমাদের থাকতে হবে সাহস। এটা আমাদের ইতিহাস শিখিয়েছে। আমাদের থাকতে হবে গভীর বিশ্বাস যেটা আমরা ঐতিহ্য থেকে শিখেছি। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আমাদের সম্প্রীতির বন্ধন। এই বিষয়গুলো আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে পেয়েছি। ভূখণ্ড থেকে পেয়েছি। এই বিষয়গুলোকে সাথে নিয়ে যদি আমরা মনোবলকে চাঙ্গা রাখতে পারি তাহলে বোধহয় এই সংকট অবশ্যই মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তবে এর পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যাপারটিকে আমাদের যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।’

ধূমকেতুের প্রশ্ন ছিল- অনেকেই সাধারণ ঠাণ্ডা, জ্বর, সর্দি নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন না এমন খবর গণমাধ্যমে আসছে। চিকিৎসক, নার্সরা ভয় পাচ্ছেন। তাদেরও নিরাপত্তার বিষয় যেমন আছে আবার মানুষও যেন চিকিৎসা পায় সে বিষয়টি দেখতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। একজন রোগী যেন ভালোবাসার বদলে ঘৃণার শিকার না হন- এ বিষয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন পরিচিত মুখ হিসেবে বক্তব্য চাইলে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেখুন প্রথমত, আমাদের দেশের ডাক্তারদের ওপর আমার তো বটেই সব মানুষের অগাধ বিশ্বাস আছে। কিছু কিছু ব্যতিক্রম হতে পারে। সেটাতো সবখানেই আছে। আমাদের ডাক্তাররা বিগত দিনে এগুলো কিন্তু পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন। আপনি দেখেন- একাত্তর সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ডাক্তার। তারা শুধু ডাক্তার ছিলেন তাই নয়। তারা মানুষের জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য তাদের জীবন দিয়েছেন। একই রকমভাবে যদি নিকট অতীতে দেখেন ডেঙ্গু যখন ছড়িয়ে পড়লো তখন আমাদের দেশের ডাক্তাররা কিভাবে রাত-দিন কষ্ট করে, জীবন বিপন্ন করে সেবা দিয়েছেন। ডাক্তাররা মারাও গেছেন। নার্স মারা গেছেন। আমার মনে হয় আমাদের দেশের ডাক্তারদের এই গুণগুলোকে প্রশংসা করা উচিত। সমাজে সবখানে তুলে আনা উচিত। তাদের নিরাপত্তার ব্যাপরটা ভাবা উচিত। যেটা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় করা হয়েছে। যেমন চীন ও ভারতে বেশ কিছু কর্মসূচি নেয়া হয়েছে ডাক্তারদের প্রশংসা করে। ডাক্তার, নার্সদের সবাই স্যালুট দিচ্ছে যে তোমরাই হচ্ছো আমাদের বীর। ডাক্তাররাও জনগণকে বলেছেন, তুমি বাড়িতে থাকো। আমি তোমার চিকিৎসার কাজটি করে দিচ্ছি। এই জিনিসগুলো আমাদের জনগণের মাঝে আনতে হবে।’

রোগীর প্রতি ভালোবাসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথায় আছে রোগীকে নয়, রোগকে ঘৃণা করো। সেটাই করতে হবে। আমাদের ইতিহাস কী বলে? আমরা কখনো নিজের আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীকে রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে ফেলে দিতে পেরেছি? পারিনি। এটা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সভ্যতায় নেই। আমরা সেই সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে এবারের করোনা সংকট মোকাবেলা করতে চাই। করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *