পুঁজিবাজার

সবুজ অর্থায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবুজ অর্থায়ন বা গ্রিন ফাইন্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি গ্রিন বন্ড ও একটি গ্রিন সুকুক অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি এবং একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি গ্রিন বন্ড অথবা সুকুকের মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থ সবুজ অর্থায়নে ব্যয় করবে।

যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকুক’র অনুমোদ দেয়া হয়েছে, তারা গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকক’র মাধ্যমে উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অর্থ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এমন খাতে ব্যয় করবে ।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বধীন কমিশন বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন সবুজ অর্থায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠান গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকুক ছাড়ার আগ্রহ দেখালে তা কমিশন খুবই ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, বিএসইসিতে কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকুক ছাড়ার আবেদন করলে তা কমিশন দ্রুত অনুমোদন দেয়ার পক্ষে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সব ধরনের ডকুমেন্ট ঠিক থাকতে হবে। ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকুক ছাড়ার আবেদন করা প্রতিষ্ঠান দ্রুত অনুমোদ পেয়ে যাবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অথবা অতালিকাভুক্ত সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে সমান অগ্রাধিকার পাবে।

এদিকে ইতোমধ্যে বিএসইসি যে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সবুজ অর্থায়নের অনুমোদন দিয়েছে তার মধ্যে একটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড, বেক্সিমকো এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন।

কোম্পানি হিসেবে দেশের প্রথম গ্রিন বন্ডের অনুমোদন পেয়েছে দেশের প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গ্রিন বন্ড ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। যার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন খাতে। বন্ডের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কোম্পানির তারল্য ও মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে।

 কোম্পানি হিসেবে দেশের প্রথম গ্রিন বন্ডের অনুমোদন পেয়েছে দেশের প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গ্রিন বন্ড ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। যার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন খাতে। বন্ডের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কোম্পানির তারল্য ও মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে।

এ বন্ড নন-কনভার্টেবল, আনসিকিউর্ড, কুপন বিয়ারিং গ্রিন বন্ড। এর কুপন হার ৯ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, তালিকাভুক্ত ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক, আঞ্চলিক ব্যাংক, সংগঠন, ট্রাস্ট ফান্ড ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনসহ অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারী প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বন্ডটি কিনতে পারবেন।

কোম্পানি হিসেবে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড প্রথম গ্রিন বন্ডের অনুমোদ পেলেও, দেশে প্রথম গ্রিন বন্ডের অনুমোদন পায় সাজেদা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনটি গ্রিন বন্ড ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। সাজেদা ফাউন্ডেশনের গ্রিন বন্ডটি জিরো কুপন বন্ড। এটি অনিরাপদ, অরূপান্তরযোগ্য এবং পূর্ণ অবসায়ন হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিরা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বন্ডটি কিনতে পারবেন। যার প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ১০ লাখ টাকা। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থ প্রতিষ্ঠানটি নতুন ও চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রেও বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করা সব অর্থ ব্যয় হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এমন খাতে।

এদিকে সবুজ অর্থায়নের অংশ হিসেবে দেশের প্রথম সুকুক ছাড়ার অনুমোদন পেয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৩ হাজার কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি গ্রিন সুকুক বিক্রি করবে।

এর মধ্যে আইপিওর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে ৭৫০ কোটি টাকা মূল্যের সুকুক। সুকুকের সংখ্যা ৭ কোটি ৫০ লাখ। সুকুকের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। বাকি ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সুকুকের মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকার সুকুক বরাদ্দ দেয়া হবে। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সুকুক প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।

সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বাড়ানো হবে এবং বেক্সিমকোর দুটি সরকার অনুমোদিত সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের (তিস্তা সোলার লিমিটেড এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড) বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে।

আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে কোম্পানির তিস্তা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ৪৬৭ কোটি টাকা, করতোয়া সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৭৮ কোটি এবং বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের ব্যবসা সম্প্রসারণে ২০৫ কোটি ব্যয় হবে।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকুক’র অনুমোদ দেয়া হয়েছে, তারা গ্রিন বন্ড বা গ্রিন সুকক’র মাধ্যমে উত্তোলন করা সম্পূর্ণ অর্থ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এমন খাতে ব্যয় করবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এমন যে কোনো খাতে বিনিয়োগ করা গ্রিন অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে কেউ যদি গ্রামে ল্যাট্রিন (শৌচাগার) স্থানে অর্থায়ন করে, সেটিও গ্রিন অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ গ্রিন বন্ডের অর্থ ল্যাট্রিন স্থাপনেও ব্যয় করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন বন্ড মার্কেটের ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রিন বন্ড ও গ্রিন সুকুক’র ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। সে কারণে ইতোমধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের গ্রিন বন্ড এবং একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রিন সুকুক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গ্রিন বন্ডের অনুমোদন পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠানের একটিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। তার পরও তাদের আবেদনে কমিশন দ্রুত সাড়া দিয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *