প্রিয় পরিচালকের প্রয়াণের খবরে তিনি মর্মাহত। কিন্তু ছুটে আসতে পারলেন না। বিদেশে বসে আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য লিখলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
তরুণ মজুমদার নেই, এই কথাটা ভাবতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি ছিলেন একটা প্রতিষ্ঠান। অনেক বড় মাপের কাজ দিয়ে গিয়েছেন আমাদের। তাঁর কীর্তিতে, সৃষ্টিতে, মননে আমরা সমৃদ্ধ। ভারতীয় সিনেমাজগতে এক অন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন তিনি। সিনেমাকে নতুন করে কী ভাবে আবিষ্কার করতে হয়, সম্পর্ককে নতুন নিরিখে দেখতে হয়, পারিবারিক গভীরতা কতটা, প্রেমকে কী ভাবে স্পর্শ করতে হয়— সব ক্ষেত্রেই তাঁর মতো দৃষ্টিভঙ্গি খুব কম মানুষের আছে।
অসম্ভব দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন। আমি যে তাঁকে কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি, এই আমার পরম পাওনা। তরুণদার সঙ্গে তিনটে ছবি করেছি, যার প্রত্যেকটাই দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে গিয়েছে। ‘আলো’ বাংলা ছবির ইতিহাসে এক মাইলফলক তৈরি করেছিল। আজও অনেকে আমায় জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আর একটা ‘আলো’ হয় না?’’
তার পর অসম্ভব সুন্দর একটি ছবি ‘চাঁদের বাড়ি’। তাতে অনেক শিল্পী ছিলেন, আমিও ছিলাম। পারিবারিক বন্ধন, ভালবাসার কী ভাবে মূল্যায়ন করতে হয়, তাঁর থেকে ভাল বোধহয় কেউ জানতেন না।
আর সঙ্গীত। ছবিতে সঙ্গীতের ব্যবহার। কী অসাধারণ! রবি ঠাকুরের গানকে তিনি অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন। তার পর ওঁর সঙ্গে করেছিলাম ‘ভালবাসার বাড়ি’। ভালবাসার সংসার। তার ভিতরের গল্প। তা ছাড়া আমার অনেক প্রিয় ছবি আছে যেগুলো তরুণ মজুমদারের তৈরি। যেমন ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘পলাতক’, ‘গণদেবতা’ আরও কত!
তিনি অন্য রকম পরিচালক। কত বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, মানুষকে কত কিছু বুঝিয়েছেন। আমি অন্তর থেকে দুঃখিত। মর্মাহত। আজ অনেক দূরে আছি, বিদেশে। তাই ছুটে যেতে পারলাম না। কিন্তু আমার মন ছুটে গিয়েছে তাঁর কাছে। তাঁর আশীর্বাদ নিতে চাই এবং বলতে চাই, তুমি আবার ফিরে এসো। আবার অনেক কিছু সৃষ্টি করো। তুমি আমাদের গর্ব। তুমি আমাদের শিক্ষক। তোমাকে প্রণাম।