সবজি বাজারের স্বস্তি

মাসের প্রথম দিকে সবজির দর শুনে সবজি বাজারের স্বস্তি মেললো।

মাসের প্রথম ছুটির দিনে বাজারে সবজির দর শুনে কিছুটা ‘হালকা’ বোধ করলেও তেল কিনতে গিয়ে পেরেশানি কমছে না; বাজেটের দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষের।
শুক্রবার রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দিন থেকেই চড়া কাঁচাবাজারে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে স্বস্তি এনেছে শীতকালীন সবজিগুলো। তবে ভোজ্যতেল ও ভালো মানের ডালের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তালে মেলাতে গিয়ে বাজারের ফর্দ এদিক-সেদিক করতে হচ্ছে।

এ কারণে শুক্রবারের বাজারদরে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও নতুন করে ভোজ্যতেলের দামবৃদ্ধি অস্বস্তি তৈরি করেছে ক্রেতাদের মাঝে।

রামপুরার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, “তেলের দাম বার বার বাড়ানো হচ্ছে। এক বছর আগেও লিটার ছিল ১০০ টাকা, এখন তা বেড়ে বেড়ে ১৬০/১৬৫ টাকা হয়েছে।

“নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসপত্রের দামই বাড়ছে; এর মধ্যে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বাজারে গিয়ে আমরা কী কিনব, আর কোনটা কিনব না, সেই হিসাব করতে হয়।”

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কথা না থাকলেও তা একটু একটু করে বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহেও বাড়ানো হয়েছে।

দোকানিরা সামনের দিকে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, দোকানে দোকানে এসে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর কথা বলে গেছেন প্রতিনিধিরা।

বোতলজাত সয়াবিনের কমিশন কমিয়ে দেওয়ায় আগে গায়ে লেখা দাম থেকে যে ছাড় দেওয়া হতো সেটিও বন্ধ করতে হয়েছে খুচরায়, বলছিলেন রামপুরা বাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের।
তিনি বলেন, “তেলের দাম আগামী সপ্তাহে থেকে আরও বাড়বে বলে ডিলাররা জানিয়ে গেছেন।

“তেলে আমাদেরকে যে পরিমাণ কমিশন দেওয়া হতো, এখন দাম বাড়বে বলে কমিশন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে গায়ের মূল্য থেকে আগে যেমন কিছু টাকা কম বিক্রি করা সম্ভব ছিল, এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না।”

শুক্রবার নগরীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ আরও কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

দোকানিরা জানালেন, বোতলজাত ভোজ্যতেল ও খোলা পাম অয়েলের দাম বেড়েছে কোম্পানিভেদে।

প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৩০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ৭২০ থেকে ৭৬৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। এক লিটার ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ১৩৩ থেকে ১৩৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ১৩৩ থেকে ১৩৬ টাকা।

তবে কাঁচাবাজারের অন্য দিকে শীতের সবজি কিনে এ সপ্তাহে ব্যাগের অনেকটাই ভরানো গেছে।
ফলন ভাল হওয়া এবং বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম কমেছে। সাধারণত এসব পণ্য ওঠার মৌসুমে দাম কিছুটা কমতে থাকে; এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি আলু ১৫ থেকে ১৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা।

দেশি পেঁয়াজ কেজি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়া আমদানি করা রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

দেশি নতুন আদা ৯০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহ ছিল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। আর আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, গত সপ্তাহ ছিল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।

অন্যদিকে মোটা দানার মশুর ডালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহ এর দাম ছিল ১০০ থেকে ১১৫ টাকা।

তবে ছোট দানার ক্যাঙ্গারু মশুর ডালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতি কেজি ছোট দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, “বাজারে শীতকালীন সবজিতে ভরপুর, দামও বেশ কম। সেই সঙ্গে সিজনের অন্যান্য জিনিসের দামও কমেছে। এবার আলু, পেঁয়াজ, রসুনের ফলন ভাল হয়েছে, বাজারেও সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম আছে।”
মালিবাগ বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম বলেন, “মৌসুমী জিনিসের দাম এখন কম থাকবে সেটা স্বাভাবিক, কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলে মনে হয়। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিবে। এই জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এতে নজর দেওয়ার উচিত।”

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা।

তবে সোনালী মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালী মুরগি গত সপ্তাহের মত ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।  এছাড়া বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, গরু ও খাসির মাংসের দাম।

প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা।

কাপ্তান বাজারের পাইকারি মুরগি বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, “খামার থেকে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে অনেক অনুষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে, যে কারণে দাম কমছে।”

রামপুরা বাজারের ‍খুচরা মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, “ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দাম কমেছে, আমরাও খুচরা পর্যায়েও দাম কমিয়ে দিয়েছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *