আইন আদালত

সতর্কতাই রক্ষাকবচ || ফেসবুকে ফাঁদ আতঙ্ক

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: মেডিকেলের ছাত্রী সুবর্ণা। রাতে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সাবিহা তাকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি নিউজ পোর্টালের লিঙ্ক পাঠিয়ে বলেছেন, রান্নার রেসিপিটা দেখ। একেবারেই আলাদা। কৌতূহলী সুবর্ণা লিঙ্কে ক্লিক করতেই দেখলেন ফেসবুক হঠাৎ লগআউট হয়ে গেছে। তিনি ভাবলেন, হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। পুনরায় ফেসবুকের হোম পেজে ফোন নম্বর ও পাসওয়ার্ড টাইপ করেন। কিন্তু ফেসবুকে আর ঢুকতে পারেন না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই হ্যাক হয়ে গেল সুবর্ণার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট! প্রিয় বান্ধবী এমন কাজ করতে পারল! রেগেমেগে সাবিহাকে ফোন করে কড়া কথা শোনাবেন। ফোন দিয়ে জানতে পারলেন ঘণ্টাখানেক আগে তার বান্ধবীর ফেসবুক আইডিটিও ছিনতাই হয়ে গেছে। তিনিও মহাবিপদে পড়েছে। একই কায়দায় হ্যাকার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফাঁদে ফেলছে। আর বিকাশ নম্বর দিয়ে টাকা দাবি করছে।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল সুবর্ণার। অজানা এক ভয় ঘিরে ধরল চারদিক থেকে। টাকার জন্য নয়, তার ভয় মেসেঞ্জারের ব্যক্তিগত আলাপ নিয়ে। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে প্রতি রাতের কথোপকথনে কত আলোচনাই তো হয়েছে। এগুলো যদি হ্যাকারের হাতে পড়ে। সে যদি ছড়িয়ে দেয়! বুক কেঁপে ওঠে সুবর্ণার। নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে যায়! ভালোবাসার মানুষটিকে সবকিছু জানালেন। সবাই নামলেন আইডি উদ্ধারে। কিন্তু হ্যাকার সুবর্ণা আর সাবিহার আইডিতে প্রবেশের সব তথ্য বদলে ফেলায় এবং ফেসবুকে কোনো রিকোভারি মেইল বা ব্যাকআপ নম্বর না থাকায় কিছুতেই কিছু হলো না। আইডিটি আর উদ্ধার করা গেল না।
ওদিকে হ্যাকার সুবর্ণা সেজে ফ্রেন্ডলিস্টের ঘনিষ্ঠজনদের জরুরি ভিত্তিতে বিকাশে টাকা চেয়ে মেসেজ পাঠাতে শুরু করেছে। এখন উপায়? দেশে ভুয়া লিঙ্কে ক্লিক করে আইডি হারানো এবং পরে হয়রানির শিকার হওয়ার এমন অভিযোগ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।

চটকদার সংবাদের লিঙ্ক, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে ভোট চেয়ে অনুরোধ, চেহারা দেখতে কোন তারকার মতো বা কার সঙ্গে বিয়ে হবে এমন উদ্ভট জরিপ, অনলাইনে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের সুযোগসহ বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে ফেসবুক আইডি হারাচ্ছেন অনেকেই। দেশে প্রচলিত এই সাইবার ক্রাইমটিকে ‘ফিশিং’ বলে। মুহূর্তের অসতর্কতায় ফিশিংয়ের শিকার হয়ে ভয়ানক সব বিপদে পড়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। ফেসবুক আইডির দখল নিয়ে ব্যক্তিগত ছবি বা চ্যাট প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে হ্যাকাররা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের পাশাপাশি অনৈতিক সম্পর্ক গড়ারও প্রস্তাব দিচ্ছে। মানসম্মান হারানোর ভয়ে ও পরিত্রাণের আশায় অনেকে আবার এমন প্রস্তাবে রাজি হতেও বাধ্য হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন হ্যাকিং বা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে করণীয় পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এবং প্রচলিত আইনে ভিকটিমের জন্য কী কী সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা আছে তা জানা না থাকায় হ্যাকারের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসেন অধিকাংশ ভুক্তভোগী। কিন্তু এভাবে আত্মসমর্পণ বিপদ থেকে রক্ষা তো করবেই না উপরন্তু হ্যাকারকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে নতুন নতুন অনৈতিক দাবি করতে।
মনে রাখা জরুরি, সামান্য অসুখ নীরবে সহ্য করে করে ক্যান্সার বাঁধানোর মানে হয় না। অনলাইনে বেচাকেনা নিয়েও ফাঁদ তৈরি করেছে প্রতারক চক্র। সম্প্রতি অনলাইনে জিনিসপত্র বেচাকেনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য অনলাইনে জিনিসপত্র কেনেন। এ সুযোগটিই বেছে নেয় প্রতারকরা। আবার টাকা পরিশোধ না করে আগেই ক্রেতার ঘরে পণ্য পৌঁছে দিতে পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয় তারা। ওইসব বিজ্ঞাপনে বলা হয়, পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করা যাবে। এ রকম একটি পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে রাজধানীর চানখাঁর পুলের ব্যবসায়ী মনিরুল হক চট্টগ্রামের ‘মধু অমৃত’ নামে ডায়াবেটিসের ওষুধ পেতে যোগাযোগ করেন। পরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তার কাছে ‘মধু অমৃত’ নামে ওষুধ পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওষুধের মূল্য বাবদ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তিনি প্যাকেটটি খুলে দেখেন কৌটার ভিতর বালু ভর্তি। এভাবে প্রতারিত হয়ে অসংখ্য ভুক্তভোগী র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *