মাতৃভূমি

সংশোধিত বাজেটে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া যাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না বলে মন্ত্রণালয়গুলোকে জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বছরের মতো এবারও অর্থ ব্যয়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, ঢালাও বিদেশভ্রমণ ও যানবাহন কেনা যাবে না। শুধু জরুরি ও অপরিহার্য প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়া যাবে।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগ এক পরিপত্রে সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা দিয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব ধরনের নতুন ও প্রতিস্থাপক গাড়ি কেনার জন্য সংশোধিত বাজেটে মূল বাজেটের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এই খাতে বরাদ্দ করা অর্থ অন্য খাতে ব্যয় বা স্থানান্তর করা যাবে না।

একইভাবে ভ্রমণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ অর্ধেক ব্যয় করা যাবে এবং অব্যয়িত অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। তবে মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনে অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটের ব্যয়সীমার মধ্যে অপারেশনাল ইউনিট বা আইটেম পরিবর্তন করা যাবে।

উল্লেখ্য, করোনার প্রভাব শুরুর পর কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনা হয়েছিল গত অর্থবছরে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার কারণে গত অর্থবছরে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছিল। তবে রাজস্ব আদায়ও গত অর্থবছরে কম হয়েছিল। গত অর্থবছরে করোনায় কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ছাড় করেনি অর্থ বিভাগ।

সব শেষে এডিপির বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ অর্থ ছাড় করে অর্থ বিভাগ। এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অর্থ বিভাগের পরিপত্রে উন্নয়ন ব্যয় যাতে বরাদ্দের পুরোটা করা যায়, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন করে আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশোধিত বাজেট বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে।

অর্থ বিভাগের পরিপত্রে পরিচালন ব্যয় বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের হিসাব করার ক্ষেত্রে গত দুই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার বা পাঁচ মাসের ব্যয় বিবেচনায় নিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া সরবরাহ ও সেবা খাতে কোনো ধরনের আইটেমের ব্যয় বাড়ানো যাবে না। মূল বাজেটে সংস্থান নেই এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহে সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পের থোক থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হলে সংশোধিত বাজেটে একই ক্ষেত্রে সেই বরাদ্দ দেখাতে হবে।

উন্নয়ন ব্যয় বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অননুমোদিত কোনো স্কিমের জন্য বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না।

তবে প্রকল্প সহায়তা আছে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন হয় এবং মানবসম্পদের উন্নয়ন হয় এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিতে বলা হয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনো খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের সুযোগ থাকলে তা করতে হবে। চলতি অর্থবছরে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বাইরে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আসবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়। আর পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

প্রতি বছরই বাজেট সংশোধনের সময় মূল বাজেট ব্যয়ের পরিবর্তন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকার মূল বাজেটের চেয়ে সংশোধিত বাজেট কম করে থাকে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলো ৩০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট বরাদ্দের ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

আরো পড়ুন:

বেসরকারি খাতে খুলছে বন্ধ ৫ পাটকল

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *