করোনা মহামারির প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দৈনিক মৃত্যু যেখানে আড়াইশ ছাড়িয়েছিল সেটা এখন চল্লিশের নিচে। শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের কম এবং হারও ছয়ের কোটায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এই অবস্থায় করোনা চলে গেছে মনে করে উদাসীন হওয়া যাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংলাপে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার নিম্নমুখী হলেও খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। গত কিছু দিন ধরে করোনার প্রকোপ কমে এলেও আবার যে তা বাড়বে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক দেশেই সংক্রমণ এভাবে কমে আবার বেড়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। এর মতো অতি সংক্রামক ভাইরাস যে আর আসবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ হয়েছে। তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ বেশি হয়। বাংলাদেশে অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই ঢেউয়ের আগে যদি আমরা এভাবে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদাসীন হই, তাহলে পরিন্থিতি খারাপ হবে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সরকার ৮০ ভাগ নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এখনো তার রোডম্যাপ পরিষ্কার নয়। দ্রুত সবাইকে টিকা দিতে হবে।’
করোনার মতো মহামারি দুই থেকে ছয় বছর তার শক্তি বজায় রাখে, এরপর এর শক্তি কমে আসে বলে জানান আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। আর এই করোনাভাইরাস বারবার তার রূপ পরিবর্তন করছে, ফলে এটা থেকে কবে বিশ্ব মুক্তি পাবে তা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি বলেও মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, বারবার রূপ পরির্তনের কারণেই একটার পর একটা ওয়েভ আসছে।
ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘তবে করোনা মহামারির মধ্যেও যেটা স্বস্তিদায়ক, তা হলো, এক বছরের মধ্যে এর টিকা আবিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে।’
তার মতে, সংক্রমণ কমলেও এখানো শতকরা পাঁচ ভাগের নিচে নামেনি। পাঁচ ভাগের নিচে নামলে সহনীয় বলা যায়। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা তো আছেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানতে হবে। ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভ্যাকসিন দিয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নিয়ম বলে জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা কমেছে। তবে শনাক্তের হার বেড়েছে দশমিক ৪৩ শতাংশ। বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা আজ বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১৩ জন কম মারা গেছেন। গতকাল ৫১ জন মারা গিয়েছিল। আজ মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন ও নারী ২৫ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৪৭ জনে।
আজ ২৯ হাজার ৭৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৯০৭ জন। গতকাল ৩১ হাজার ১৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৮৬২ জন। দেশে এ পর্যন্ত ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার ১১০ জন। মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।
/জেড এইচ