লেখালেখি

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি মানেই ভক্তদের লাইন ধরে অটোগ্রাফ নেওয়া বা জটলা করে প্রিয় লেখকের সঙ্গে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। চলমান করোনাকালে গত কয়েক মাস আগের বইমেলার খোলা মাঠে একজন হুমায়ূন আহমেদকে যেন আরও বেশি করে অনুভব করেছে সবাই। নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের না-ফেরার দেশে চলে যাওয়ার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার ১৯ জুলাই।

২০১২ সালের এই দিনে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুমায়ূন আহমেদ। দেশে নিয়ে আসার পর তার মরদেহ সমাহিত করা হয় গাজীপুরে নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। প্রতিবছর হুমায়ূনের মৃত্যুদিনে তার প্রিয় নুহাশপল্লীতে ছুটে আসতেন ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ ছাড়াও সেখানে এতিম ও অনাথ শিশুদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হতো। তবে করোনাকালীন বিধিনিষেধ মানতে এ বছর এসব অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছেন নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরে সহস্রাধিক মানুষকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হতো। এবার করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠান হবে না। খাওয়ানোর অনুষ্ঠানে যে টাকা খরচ হতো, সে পরিমাণ অর্থ এতিম ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তবে আজ সকালে নুহাশপল্লীতে উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

হুমায়ূন আহমেদের কাছের মানুষদের একজন ছিলেন লেখক, নাট্যকার ও তথ্যচিত্র নির্মাতা শাকুর মজিদ। এক কথোপকথনে তিনি বলেন, ‘নাজিম হিকমতের কবিতায় এ রকম একটা লাইন আছে- বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর। তো ৯ বছরে হুমায়ূন আহমেদ আমাদের আলাপ-আলোচনা ও আড্ডা থেকে অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছেন। হঠাৎ-হঠাৎ মনে হয়, এ রকম একটা সময় হলে তো হুমায়ূন আহমেদের ডাক আসত।’

হুমায়ূন আহমেদের মতো সৃষ্টিশীল মানুষের কখনও মৃত্যু হয় না উল্লেখ করে শাকুর মজিদ আরও বলেন, ‘তার কাজগুলো বেঁচে আছে। লেখাগুলো পড়ে মানুষ এখনও পুলকিত হয়। তার লেখা পুরোনো নাটকগুলো দেখে মানুষ আনন্দ পায়। যে কাজগুলো তিনি রেখে গেছেন, সেগুলো অবলম্বন করেই আমরা অনেক দিন থাকতে পারব বলে আমি মনে করি।’

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্ম নেন। তার ডাকনাম কাজল। বাবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নাতিদীর্ঘ উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ লেখার মধ্য দিয়ে হুমায়ূনের সাহিত্যজীবনের শুরু। এর পর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা এবং চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন প্রতিভা ও সাফল্যের স্বাক্ষর।

১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই হুমায়ূন আহমেদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। টিভি নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার রচিত প্রথম ধারাবাহিক টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

১৯৭৩ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন হুমায়ূন আহমেদ। এই দম্পতির চার ছেলেমেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৩ সালে তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই ছেলে নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন।

হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ই-বই ও চলচ্চিত্র: হুমায়ূন স্মরণে এ দিনটিতে নানা আয়োজনে তাকে স্মরণ করা হবে। বিশেষ আয়োজন করেছে ই-বুক পড়া ও অডিও বই শোনার অ্যাপ ‘বইঘর’। এখানে লেখকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বইয়ের ই-বই ভার্সন ও অডিও বই রয়েছে। রয়েছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা কয়েকটি ই-বই। এর মধ্যে অন্যতম শোয়েব সর্বনামের লেখা ‘শাওনের বয়ানে হুমায়ূন’।

‘শাওনের বয়ানে হুমায়ূন’ বইটিতে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সাক্ষাৎকার। প্রিয় লেখক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। যুক্ত করা হয়েছে সংশ্নিষ্ট কিছু স্থিরচিত্র, হুমায়ূনের লেখা চিঠি, চিরকুট প্রভৃতি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভিতে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সৃষ্টি ‘মিসির আলি’ চরিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দেবী’। অনম বিশ্বাসের পারিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরীসহ অনেকে। বাংলাভিশনে সকাল সাড়ে ৮টায় ‘দিন প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে হাজির হন ডা. এজাজুল ইসলাম। হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে নানা স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *