মাতৃভূমি

শুরু হতে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের বাস্তবায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: কমিউনিটি বেসড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিককেন্দ্রিক বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অল্পদিনেই কেটে যাচ্ছে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’ কেন্দ্রিক মামলাজনিত জটিলতা। এই ট্রাস্টে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডরদের (সিএইচসিপি) কর্মজীবন নিশ্চিত করা হয়েছে। হেলথ প্রোভাইডররা দেশে প্রচলিত অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় তাদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি ও অবসরভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এতে কর্মচারীদের মধ্যে কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে বিদ্যমান অসন্তোষ দূর হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরবর্তীতে সরকার দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাশ করে। কিন্তু রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন অনেক কমিউটি হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), ওই সব রিটের সমাধান এখন শেষ পর্যায়ে।

নতুন পরিকল্পনায় কার্যক্রমসমূহের মধ্যে রয়েছে জনবল বৃদ্ধি, নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ ও জরাজীর্ণ সিসি মেরামত করা। জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, কমিউনিটি ক্লিনিকের টেকসই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ‘স্বাভাবিক ডেলিভারি’ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে নতুন আঙ্গিকে তিন কক্ষের (স্বাভাবিক প্রসবকক্ষসহ) কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হচ্ছে। পরে ক্লিনিক নতুন মডেল অনুযায়ী নির্মিত হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল ও মানসম্মত করে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রকল্প। ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে মিলছে স্বাস্থ্যসেবা। কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশ-বিদেশে নন্দিত।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ লোকজন বাড়ির কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম আরও গতিশীল, মানসম্মত ও স্থায়িত্ব সুনিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন কার্যক্রম, অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) তুলসী রঞ্জন সাহা ধূমকেতু ডটকমকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম, যা বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, দেশে বিদেশে নন্দিত।

এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষ কাছাকাছি কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে কমিউনিটি ক্লিনিককে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনার অবদান কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’ স্লোগানটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান কিছু সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাত সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় সিবিএইচসি অপারেশন প্ল্যানে কমিউনিটি ক্লিনিককেন্দ্রিক বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক লাইন ডিরেক্টর ডাঃ আবুল হাশেম জানান, প্রতিদিন প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে ৩৮ জন সেবাগ্রহীতা আসছেন। ২৯ প্রকারের ওষুধ বিনামূলে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি হচ্ছে। এ পর্যন্ত স্বাভাবিক ডেলিভারি লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম সুষ্ঠু বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের দৈনন্দিন পরিচালনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছে।

ট্রাস্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর উদ্দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রী। সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের অধীন প্রকল্প কার্যালয় বা কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃক কোন কার্য বা গৃহীত ব্যবস্থা কিংবা ইস্যুকৃত বিজ্ঞপ্তি ট্রাস্ট কর্তৃক কৃত, গৃহীত বা ইস্যুকৃত বলে গণ্য হবে। সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের সব দায়দায়িত্ব ট্রাস্টের দায়-দায়িত্ব বলে গণ্য হবে।

অপারেশনাল প্ল্যানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সব কর্মচারীর চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাস্টে ন্যস্ত হবে এবং উক্ত প্রকল্প ও প্ল্যানের অধীন চাকরির জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তাদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হবে। দেশে প্রচলিত অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় তাদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি ও অবসরভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *