তাপস হালদার:
শেখ হাসিনা শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই প্রধানমন্ত্রী নন, তৃতীয় বিশ্বের একজন মানবিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। জাতির পিতার পর আর কোনো বাঙ্গালী রাষ্ট্রপ্রধান এভাবে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু কন্যার সঠিক ও সময়োপযোগী নেতৃত্বদানের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মর্যদার আসনে অধিষ্ঠিত। দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের গর্ব, অহংকার।

২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জেষ্ঠ্য সন্তান হিসেবে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হন। পিতা তখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। মহান পিতার আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন।

আরও পড়ুন: সম্প্রীতির পতাকা হাতে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

পিতার মতই তাঁর মানুষের প্রতি আছে অগাধ ভালোবাসা ও সহমর্মিতা ।এজন্যই তিনি বাঙ্গালীর অতি আপনজন হতে পেরেছেন। ছোট বেলা থেকে তিনি এই গুণটি বাবা-মার কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি কখনো ভগিনী, কখনো মমতাময়ী মা, আবার কখনো অতি আপনজন হিসেবে বাঙ্গালীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এজন্যই তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে লক্ষ লক্ষ জনতার সম্বর্ধনায় বলেছিলেন, ‘আমি বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, আমি বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে এসেছি। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আপনারাই আমার পরম আত্মীয়। …….. আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে নামতে চাই। মৃত্যুকে ভয় পাই না। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের জন্যই জীবন দিয়েছেন। আমিও প্রয়োজনে বাবার মতো আপনাদের জন্য জীবন দিব’।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের নেতাই নন, তৃতীয় বিশ্বের একজন মানবতাবাদী নেতা হিসেবে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব মঞ্চে একজন প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন। নানা কারণে শেখ হাসিনার কথায় বিশ্ব সম্প্রদায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর তিনি। অসহায়, বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের একক প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন।

করোনা মহামারীর সময় মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে, একদিকে জীবন অন্যদিকে জীবিকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই বিশ্বে একমাত্র নেতা যিনি দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন। ৫ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। তিনি শুরুতেই বলেছেন, একটি লোককেও না খেয়ে মরতে হবে না। যতদিন সংকট থাকবে ততদিন খাদ্য সহায়তা দিবে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন সিন্ধান্তের ফলে খুব সফলভাবে খাদ্য সংকট মোকাবেলা করছে সরকার, একটি লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে ছিল এত বিশাল জনসংখ্যা, স্বল্প আয়ের মানুষ নিয়ে কিভাবে শেখ হাসিনা সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে? কিন্তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে শুধু পরিস্থিতি মোকাবেলাই নয়, বিশ্বে করোনা মোকাবেলায় রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতির সময়ে একাধিক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একসাথে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহবান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লিখেছেন একাধিক নিবন্ধ। ভ্যাকসিন যেন প্রান্তিক, দরিদ্র জনগোষ্ঠী পায় সেজন্য তহবিল গঠনের উপর জোর দিয়েছেন। ভ্যাকসিন বৈষম্য যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বার বার আহবান জানিয়েছেন। বিশ্বে তিনিই প্রথম সরকার প্রধান যিনি এ বক্তব্য জোরালোভাবে তুলে ধরছেন।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো যাতে মারাত্মক বিপর্যয় ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয় যে বিষয়েও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বার বার তুলে ধরেছেন। জলবায়ু সংক্রান্ত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে ৫ দফা দা্বী পেশ করে বলেন, দুর্বল দেশগুলোকে তহবিল সরবরাহ করতে হবে, জলবায়ু শরনার্থীদের পুনর্বাসন একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে। বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে সে রূপরেখাও তিনি তুলে ধরেছেন।

মায়ানমারে যখন জাতিগত নিধনে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত, যখন বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো চুপ করে বসেছিল, তখন ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার সাহস দেখিয়ে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরনার্থী শিবির এখন বাংলাদেশে। এই মহান কাজটি করার ফলে বিশ্ব নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়ষী প্রশংসা করে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকিন ইউনিভার্সিটির ‘সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশিপ’ তাঁকে ২০১৭ সালে ‘মানবতার চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি বিশাল হৃদয়ই যথেষ্ট। বাংলাদেশ কোনো উন্নত রাষ্ট্র নয়, অফুরন্ত সম্পদও নেই দেশটির, তারপরও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব মানবতার নেতৃত্ব নিয়েছেন’।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আরেক নোবেল বিজয়ী ভারতের কৈলাস সত্যার্থী বলেছেন, ‘বিশ্ব মানবতার আলোকবর্তিকা’ হলো দেশরত্ব শেখ হাসিনা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা একজন বিরল মানবতাবাদী নেতা’।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীমতি সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘বাবার মত বিশাল হৃদয় তাঁর। যেখানে ভালোবাসার অভাব নেই’।

গার্ডিয়ান পত্রিকা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, তা এক কথায় বিরল। তিনি যে একজন হৃদয়বান রাষ্ট্রনায়ক তা আগেও প্রমাণ করেছেন, এবারও প্রমাণ করলেন’।

ইন্ডিয়া টুডে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চাইতে বড়।

যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে তাঁর কোনো কার্পণ্য নেই।

মাতৃস্নেহের এমন অনেক উদাহরণ আছে তাঁর। যখন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব হারিয়েছিল তখন পিতৃ মাতৃহীন রুনা, রত্না, আসমাকে নিজ কন্যার মর্যদা দিয়ে গণভবনে বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। শুধু বিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি, তাদের পরিবারগুলো যাতে ভালো থাকে সেজন্য যোগ্যতা অনুযায়ী জামাইদের চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। দেশের যেখানেই অসহায় মানুষের খবর পান, তিনি নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে পাশে দাঁড়ান। সেখানে দল মত, ধর্ম গোত্র কিছুই বিবেচনা করেন না। অসহায় মানুষটির সেবাকেই তিনি ব্রত মনে করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও দেশরত্ন শেখ হাসিনাসহ পুরো পরিবারই একটি মানবিক পরিবার। দেশের মানুষের জন্য সব সময় এই পরিবারটি সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে, দিয়ে যাচ্ছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রতিটা অসহায় মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি দলমত নির্বিশেষে সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পুরো বাংলাদেশটাই তাঁর পরিবার।

একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত। সততা, পরিশ্রম, সাহস, মানবিকতা ও দেশপ্রেম তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। তিনিই বাঙ্গালী জাতির ঐক্যের প্রতীক। আশা ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জয়ের স্বপ্নসারথী, বিশ্ব মানবতার মা দেশরত্ন শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। শুভ জন্মদিনে প্রার্থনা করি তিনি যেন শতায়ু হোন। শুভ হোক আপনার জন্মদিন। আপনাকে জানাই অবনতমস্তকে প্রণতি।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

ইমেইল: haldertapas80@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *