মাতৃভূমি

শিশু শিক্ষার্থী শম্পা আর ভ্যান চালাবে না, দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: জামালপুরের শিশু শিক্ষার্থী ভ্যানচালক শম্পা খাতুনের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জামালপুরের ডিসি শম্পাদের বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ পরিবারের থাকার জন্য পাকা ঘর তৈরির কাজও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘বাবার চিকিৎসার জন্য ভ্যান চালায় শিশু শম্পা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি নজরে এলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

১০ বছর বয়সের শম্পা খাতুন জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাকাটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম ওরফে ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে ছোট সে। কয়েক বছর আগে শফিকুলের বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

শফিকুল আগে ভ্যান চালাতেন। পাঁচ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তার এক পা ভেঙে যায়।

পরিবারের প্রায় সবকিছু বিক্রি করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তার পা ভালো হয়নি। ফলে ঘরে পড়ে আছেন শফিকুল।

তাই বাবার ওষুধের টাকাসহ অভাবের সংসারের হাল ধরতে দেড় বছর আগে ভ্যান চালানো শুরু করে ছোট্ট শিশু শম্পা। এ নিয়ে গত ২৯ নভেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেই খবর প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গত সোমবার সকালে শম্পাদের বাড়িতে যান জামালপুরের ডিসি মোহাম্মদ এনামুল হক। শম্পাদের পরিবারের পরিস্থিতি জেনে নিয়ে ওইদিনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।

এরপর প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বুধবার সকালে তিনি আবারও শম্পাদের বাড়িতে যান এবং শফিকুলকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

সে সময় ডিসি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকাতেই শফিকুলের চিকিৎসা হবে।”

শম্পাদের থাকার জন্য একটি পাকা ঘর তৈরির কাজও উদ্বোধন করেন ডিসি।

তিনি বলেন, শিশু শম্পার লেখাপড়াসহ পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে যা যা প্রয়োজন তাই করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

জামালপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনও এ সময় তার সাথে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করে শিশু শম্পা বলে, “আমি আর ভ্যান চালাব না। এখন আমি লেখাপড়া করব। এখন আর আমার চিন্তা নাই। চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বিগত দিনের কষ্টের কথা মনে পড়ে যায় শম্পার মা নেবুজা বেগমের।

তিনি বলেন, “গত ৬ বছরে কোনো ঈদে শম্পার মুখে সেমাই তুলে দিতে পারি নাই। ঠিকমত খাবারও দিতে পারি নাই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন, নতুন পাকা ঘর করে দিচ্ছেন, পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন, আমি এতই আনন্দিত হয়েছি যে এখন কথা বলতে পারছি না। কীভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।”

তাদের জন্য পাকা ঘর বানাতে ইতোমধ্যে নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছে গেছে উঠোনে।

সেসব দেখিয়ে নেবুজা বেগম বলেন, “বাড়িতে ইট, বালি, সিমেন্ট আসছে। বাড়ি তৈরি কাজ শুরু হয়েছে। যা আমি জীবনে কল্পনা করিনি। আল্লাহ প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখুক। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেই দেশের অসহায় পরিবারগুলো ভালো আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *