শৈশব-কৈশোর

শিশুর বই পড়ার অভ্যাস কীভাবে গড়বেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: শিশু মাতৃগর্ভে ২০ সপ্তাহ বয়স থেকেই তার অনুভূতি অর্জন করে এবং মুভমেন্টের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। এ কারণে গর্ভবতী মায়ের মানসিক দিকগুলো শিশুর ডেভেলপমেন্টে দারুণ প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসকরা মাকে সব সময় স্ট্রেসমুক্ত থাকার উপদেশ দেন।

এখন আসি বই এর কথায়। শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন বেশিরভাগ মানুষ ধর্মগ্রন্থ কেন পড়েন? কারণ, বহুযুগ আগে থেকেই এটা মানুষের জানা যে গর্ভাবস্থায় মা যা করেন, যা ফেইস করেন, যে পরিবেশে থাকেন তার সবকিছুর প্রভাব শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখে। আর এটা বুঝতে রকেট সায়েন্স পড়া বা জানার দরকার হয় না। এ কারণে যে কোন ভাল বই-ই শিশুর জন্মের আগে এবং পরে বিকাশে দারুণ ভূমিকা রাখে।

১. গর্ভাবস্থায় মায়েরা ধর্মগ্রন্থ বা গল্প পড়ে শোনান অনাগত শিশুকে। সে তার ভাব প্রকাশ করবে একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন।

২. বাবারা মায়ের পাশে বসে তার অনাগত শিশুকে পড়ে শোনাতে পারেন মজার মজার গল্প। এতে আপনার সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক তৈরি হবে। সে আপনার গলার স্বর চিনে রাখবে তখন থেকেই।

৩. জন্মের পরও রোজ একই সময়ে মজার মজার ছবিসহ বইগুলো পড়ে শোনান শিশুদের মতো আদরের সুরে। আপনার এক্সপ্রেশনে শিশু তার যা বোঝার সব বুঝে নেবে। আপনার সঙ্গে ইন্টারাক্ট করবে বা বা বু বু আ আ জাতীয় শব্দ করে। এতে শিশুর শব্দ ভাণ্ডার তৈরি হবে। আজকাল যে স্পিচ ডিলের প্রবলেম অনেকেই ফেইস করেন তা করতে হবে না। শুরুতেই বইয়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক তৈরি হবে।

৪. সব সময় কালারফুল অনেক ছবি সহকারে যে বইগুলো আছে তা নির্বাচন করুন যতদিন না শিশু অক্ষর চেনা শেখে।

৫. একই বই রোজ পড়বেন না। বেশ কিছু বই রাখুন। পড়ার আগে শিশুকে দেখান কোন বইয়ের গল্প সে শুনতে চায়।

৬. ফুল, পাখি, জীবজন্তু, মাছ এসবের গল্পগুলো শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই এ ধরনের বই রাখতে পারেন।

৭. কখনও শিশুকে ভূত কিংবা রাক্ষস-খোক্কসের গল্প পড়ে শুনিয়ে তার ভেতর পৃথিবী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেবেন না।

৮. যে বইটি পড়বেন তার চরিত্রগুলো অভিনয় করে শোনান। বইয়ে বর্ণিত চারদিকের পরিবেশটা এমনভাবে বলুন যেন ঠিক তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন।

৯. আজকাল বাজারে দারুণ সব ফ্লাশ কার্ড পাওয়া যায়। এ ফ্লাশ কার্ড দিয়ে শিশুকে বাংলা-ইংরেজি অক্ষরগুলো, কালার, বডি পার্টস, অ্যানিমেল বিভিন্ন জিনিস শেখানো শুরু করতে পারেন ২ বছর থেকে। একে বলে পিকচার রিডিং। শিশু যা দেখে এ বয়সে সবই ছবি আকারে দেখে এবং তা মনে রাখে। তাই খুব সহজে শিখে ফেলে খেলতে খেলতে।

১০. বই পড়া নিয়ে কখনই জোর করবেন না। তাকে আকর্ষণ করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করুন। যেমন বলতে পারেন, মা-বাবা তো পড়তে পারে না। বাবু কি একটু শেখাবে কেমন করে পড়তে হয়! কিংবা বলুন- চল চল আজকে আমরা স্কুল স্কুল খেলি। বাবু টিচার, মা স্টুডেন্ট। বুদ্ধি খাটিয়ে এমনকিছু বের করুন যেন শিশু বইয়ের প্রতি আকর্ষিত হয়। জোর করে কখনও নয়।

১১. বাসায় শিশুর জন্য ছোট্ট করে রিডিং কর্নার তৈরি করুন। যেখানে থাকবে মজার সব ছবিওয়ালা কালারফুল বই। গল্পের বই।

১২. রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম করে স্টোরি টাইম তৈরি করুন। প্রতিদিন মা অথবা বাবা এসময় শিশুকে পড়ে শোনান মজার আনন্দের সব গল্প।

১৩. রোজ একসঙ্গে বই পড়ার কারণে শিশুর সঙ্গে মা-বাবার একটা সুন্দর বন্ডিং তৈরি হবে।

১৪. যেসব মানুষ বই নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবে বুঝবেন এরা তর্কের ঊর্ধ্বে। উলুবনে মুক্ত ছড়ানোর চেষ্টা না করে নিজের কাজটি চালিয়ে যান। এরা কখনও বুঝবে না। তাই এড়িয়ে চলুন।

১৫. শিশুকে যে কোন জিনিস কিনে দিলে সঙ্গে একটি বই অবশ্যই কেনার অভ্যাস করুন। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসে, জন্মদিনে জামা কাপড়, খেলনার সঙ্গে বইও কিনুন।

১৬. বাড়িতে দৈনিক পত্রিকা যেমন নেন ঠিক তেমনি শিশুর জন্য কিশোর-পত্রিকা রাখুন। কমিকস রাখুন। মনে রাখবেন প্রতিটি ভাল অভ্যাস পরিবার থেকেই আসে।

বই এমন এক জিনিস যা মানুষের ভেতর তৈরি করে শত শত শব্দ ভাণ্ডার। তৈরি করে কল্পনাশক্তি। একটি ভাল বই পড়ার সময় বইয়ের চরিত্রগুলো, পরিবেশ সবকিছু ব্রেইন একটা ভিজুয়াল মুভির মতো করে চোখের সামনে উপস্থাপন করে যা আর অন্য কোন মাধ্যম করতে পারে না। এতে করে তৈরি হয় কল্পনাশক্তি। বই মানুষের মানবিক গুণাবলী সমৃদ্ধ করে। মানুষকে সত্যিকার মানুষ হতে শেখায়।

আমরা যারা বই পড়ে বড় হয়েছি তারা জানি বই কতটা আনন্দের। আজকাল শিশু-কিশোরদের উপযোগী নানা গেজেট বা ট্যাবলেট কম্পিউটার পাওয়া যায়, সেসবে খুঁজে নিতে পারেন অনলাইন বুক রিডিং সাইটগুলো। মায়ের দুধের বিকল্প যেমন কিছু হতে পারে না ঠিক তেমনি বইয়ের বিকল্প আর কোনকিছু হতে পারে না। নিজে বই পড়ুন, শিশুকে বই পড়তে উৎসাহ দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *