শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় জানা বর্তমানে সকল বাবা মায়ের জন্য প্রয়োজন। স্মার্টফোন আমাদের জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ কিংবা কাজ, স্মার্টফোন থাকলেই চলে। স্মার্টফোন এখন সব বয়সের মানুষের হাতে দেখা যায়। এই ডিভাইসটি যতটা উপকারী, ততটাই ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।

প্রায় সব অভিভাবকই শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেন। কিছু সময়ের জন্য মোবাইল দেখা একসময় আসক্তিতে পরিণত হয় শিশুর। তখন আর কোনোভাবেই মোবাইল ছাড়া বাচ্চাকে রাখা সম্ভব হয় না। তখন বাচ্চার খিটখিটে মেজাজ, অমনোযোগ, ঘুমের সমস্যা থেকে শুরু করে নানান সমস্যা।

কিশোর বয়সীদের মাঝেও দেখা যায় আচরণগত সমস্যা, বাবা-মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য, লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

সন্তানের এরকম মোবাইল আসক্তির প্রতিকারে বাবা মায়ের করণীয় নিয়েই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নিই কিভাবে শিশুর মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমিয়ে আনবেন।

আরও পড়ুনঃ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের প্রভাব নিয়ে গবেষণা

শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়ঃ

১. বাচ্চা খুব ছোট হলে তার চোখের সামনে কখনো ফোন ব্যবহার করবেন না কিংবা ফোন রাখবেন না। প্রয়োজনে আপনার কাছের মানুষ, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন, যে সময় আপনি তাদের সঙ্গে বা তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

২. কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কুফল বুঝিয়ে বলুন। তাদের দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন তৈরি করে দিন। রুটিনটা হবে ঘুম থেকে ওঠা শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। এই রুটিনে সন্তানের লেখাপড়া থেকে শুরু করে, খাওয়া-দাওয়া, গোসল, বিশ্রাম, বিনোদন ও খেলাধুলাকে রাখুন।

৩. সন্তানের অন্যান্য ভালো কাজ, গুণের বেশি বেশি প্রশংসা করুন। সেগুলোর চর্চাকে উৎসাহিত করুন। সুযোগ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে তার প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ করে দিন।

৪. সন্তান যদি মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে রুটিন মানতে না চায় ও কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি, রাগ-জেদ করে, তখন তাকে বকাঝকা বা মারধর না করে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। বরং তার পছন্দের একটি জিনিস বা সুবিধা সরিয়ে নিন। এটাকে বলা হচ্ছে নেগেটিভ পানিশমেন্ট। নেগেটিভ পানিশমেন্ট, বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৫. শিশুর জন্য রংবেরঙের আকর্ষণীয় বই কিনুন, সেগুলো নিয়ে তার সঙ্গে ইন্টারেক্টিভ সময় কাটান। তার সঙ্গে ছড়া বলুন বা গান করুন। শিশু হাসলে ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলে আপনিও হাসুন। বিভিন্ন রংপেনসিল, রঙিন কাগজ এগুলো নিয়ে তার সঙ্গে বসে ছবি আঁকুন এবং রং করুন।

৬. কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে একেবারেই মোবাইল ব্যবহার না করতে দেওয়াটা আজকাল অসম্ভবই বলা যায়। সে ক্ষেত্রে তার রুটিনে মোবাইল ব্যবহারের জন্যও একটি নির্ধারিত সময় রাখুন। এই রুটিন অনুসরণ করতে সন্তানকে উৎসাহ দিন। এজন্য তার পছন্দনীয় ছোট ছোট পুরস্কার দিতে পারেন।

পরিশেষে উল্লেখিত সব পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরেও আপনি যদি সন্তানের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, তবে অবশ্যই একজন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *