শৈশব-কৈশোর

শিশুদের জন্য ভিটামিন ‘এ’-এর গুরুত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: শেষ হয়েছে পক্ষকালব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের প্রথম রাউন্ড। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশের বিশেষত শিশু-কিশোরদের খাবারে ভিটামিন ‘এ’-এর স্বল্পতা রয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে দেহে ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি প্রকটভাবে দেখা দেয়। ফলে শিশু-কিশোর ও গর্ভবতী মায়েরা বিভিন্ন জটিলতায় ভোগে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ছোট মাছ, মাংশ, ডিমের হলুদ অংশ, দুধ ও দুধের তৈরি খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। উদ্ভিজ উৎস যেমন- গাজর, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফলমূলে প্রো-ভিটামিন ‘এ’ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে। অন্ধত্ব নিবারণ ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’ দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বর্তমান করোনা অতিমারিসহ অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সহায়ক হতে পারে। ভিটামিন ‘এ’ একদিকে যেমন শ্বাসনালির আবরণী টিস্যুসহ সব আবরণী টিস্যু ও মিউকাসের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে, অন্যদিকে যোদ্ধাপ্রোটিন (অ্যান্টিবডি) তৈরিতেও ভিটামিন ‘এ’ অপরিহার্য। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে আবরণী টিস্যুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। অধিকন্তু রক্তে অবস্থিত নির্দিষ্ট কিছু জীবাণুবিরোধী কোষের কার্যক্ষমতাও লোপ পায়। এজন্য ভিটামিন ‘এ’ প্রদাহবিরোধী (অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি) ভিটামিন।

ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব ও মৃত্যুঝুঁকি থেকে পরিত্রাণের উপায়-

১। জন্মের একঘণ্টার মধ্যে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ শালদুধ খাওয়াতে হবে। ২। ছয় মাস শেষে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি পরিপূরক খাবার যেমন- সবজি খিচুড়ি, লালশাক, পালংশাক, গাজর; রঙিন ফল যেমন- পেঁপে, কাঁঠাল ইত্যাদি অল্প করে দিতে হবে। ৩। ছোট মাছ মলা, ঢেলা বা লাল মাংশ দিয়ে নরম খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। ৪। হাম হলে ২ ডোজ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসুল ডে-১ ও ডে-২ দিতে হবে। ৫। মারাত্মক অপুষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় ১ ডোজ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলই যথেষ্ট। ৬। ভিটামিন ‘এ’ সাপ্লিমেন্ট- ছয় মাস বয়স থেকে ৫৯ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস অন্তর ১ ডোজ ভিটামিন ‘এ’, ১ বছর একটি সবুজ ক্যাপসুল, ১ বছর একটি লাল ক্যাপসুল। ৭। ভিটামিন ‘এ’-এর সহজলভ্য উৎস সম্পর্কে শিক্ষাদান।

করোনা অতিমারির মধ্যেও যাতে শিশুরা ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত অন্ধত্ব ও অপুষ্টিতে না ভোগে, সেজন্য সরকার টিকাদান কেন্দ্র ও স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৬ মাস বয়স থেকে ৫৯ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের পক্ষকালব্যাপী ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচি নিয়েছে। আসুন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের এ কর্মসূচিকে সফল করে তুলি ও ছোট্ট সোনামণিদের অপুষ্টি থেকে রক্ষা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *