স্বাস্থ্য

শিশুদের চোখ বাঁচাতে মোবাইল, ট্যাব থেকে দূরে রাখার বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: লকডাউনে স্কুল বন্ধ, বাইরে যাওয়া বন্ধ, খেলাধুলাও বন্ধ। শিশু ঘরে বসে করবেটা কী! সুতরাং হাতে ধরিয়ে দাও মোবাইল ফোন। যারা আগে ফোন থেকে দূরে ছিল তারাও হয়ে গেলো আসক্ত। এখন খেলার সময়, খাওয়ার আগে, অনলাইন ক্লাস- সব সময়ই চাই ফোন। আর এতে করে ড্রাই আই থেকে শুরু করে রেটিনার কার্যকারিতা কমে যাওয়া ও মাইনাস পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার মতো শিশুরোগী বাড়ছে মারাত্মক হারে।

আগেও ডিভাইস ব্যবহার করতো শিশুরা। কিন্তু তাতে একটা রুটিন ছিল। মাঝে শিশু স্কুলে গিয়েছে, বাবা-মায়ের সঙ্গে বাইরে গিয়েছে, নাচের স্কুল-গানের স্কুল, মার্শাল আর্ট, ছবি আঁকা, বন্ধুদের জন্মদিন—কত কী ছিল। এখন ক্লাসও হচ্ছে অনলাইনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকো মনিটরে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতেও চালু করো মেসেঞ্জার কিংবা জুম। বিনোদন মানে মোবাইলে গেমস। এই স্ক্রিন নির্ভরতার কারণে শিশুদের জীবনযাত্রায় এসেছে ভয়ানক পরিবর্তন। শারীরিক ও মানসিক দুটো স্বাস্থ্যই হুমকির মুখে। এরই মধ্যে নেতিবাচক সাড়া দিতে শুরু করেছে চোখ। শিশুরোগী বাড়ছে চক্ষু হাসপাতালগুলোতে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল আই সেন্টার জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাজ্যের হাসপাতালের সহযোগিতায় প্রায় ৪৫০০ শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে তাদের চোখের ‘মাইনাস’ পাওয়ার বেড়ে যাচ্ছে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত মাসে চোখের সমস্যা নিয়ে শিশুরোগী বেড়েছে অনেক। ‘ভিশন সিনড্রোম’ নিয়ে আসা শিশুদেরকেই বেশি পাচ্ছি—মন্তব্য চিকিৎসকদের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছে এক বছরের নিচের শিশুদের ‘নো স্ক্রিন টাইম’ তথা কিছুতেই ডিজিটাল পর্দার দিকে তাকানো চলবে না। দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের জন্য বরাদ্দ বড় জোর দিনে এক ঘণ্টা। এরপর সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবে।

করোনা প্রাদুর্ভাবে আগের চেয়ে বেশি শিশু রোগী পাচ্ছি মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিট্রিও-রেটিনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী।

তিনি জানালেন, চোখের জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ পিটপিট করা, চোখ দিয়ে পানি পড়া—এই অভিযোগই বেশি শিশুদের।

এসব নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই বলছেন চিকিৎসকরা। অভিভাবকদেরও তারা বলে দিচ্ছেন শিশুর চোখ থেকে কতটুকু দূরত্বে রাখতে হবে মোবাইল ফোন। অভিভাবকরা বলছেন, শিশুদের সেসব নিয়ম মানানো যাচ্ছে না।

ডা. তারিক রেজা আলী বলেন, কোনোভাবেই শিশু যেন একনাগাড়ে কম্পিউটারের সামনে বা কোনও ডিভাইসের সামনে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর তাকে উঠে চোখের রেস্ট নিতে হবে। ২০ মিনিট পরপর অন্তত ২০-৩০ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ রাখতে বলি আমরা। তাতে করে চোখের ওপর চাপ অনেকটা কমে।

এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশুদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যাকে বলে মায়োপিয়া। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা কাছের জিনিস ভালো দেখলেও দূরের জিনিস দেখতে পায় না। এ সমস্যা বাড়লে শিশুরা দূরের বস্তু আর দেখবেই না। এতে কিন্তু দূর থেকে আসা যানবাহনও দেখবে না।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, টানা কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনও ইলেক্ট্রিক ডিভাইসে তাকিয়ে থাকাটা বড় ছোট সবার চোখের জন্যই ক্ষতিকর। ছোটদের বেলায় সেটা আরও বেশি ক্ষতিকর।

অভিভাবকদের অনেকে ভাবেন, শিশুদের চোখের সমস্যা বোধহয় কম হয়। যার কারণে তারা পরীক্ষাও করান না। এসব শিশুর জন্য তখন সমস্যাটা আরও প্রকট হয়।

‘গত দুই আড়াই মাসের মতো সময়ে শিশুরা চোখ আর মাথাব্যথা নিয়ে আসছে বেশি। এর কারণ, রিফ্লেক্টিভ এরর। অর্থাৎ তাদের চশমার প্রয়োজন হচ্ছে।’

স্মার্টফোন, ট্যাবগুলোর পর্দায় ব্যাকগ্রাউন্ড ইলুমিনেশন অর্থাৎ যেটা দিয়ে লাইট ঠিকরে বের হয় তাতে ক্ষতিকর নীল রশ্মিও থাকে। এটা চোখের রেটিনার কার্যকরী জায়গাটা নষ্ট করে দিতে পারে। জানালেন ডা. মাফরুহা আফরিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *