নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: সরকারের নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চলছে জোর প্রস্তুতি।করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রায় ১১ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে বলার পর বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের ধুলোমাখা বেঞ্চ, ব্লাক বোর্ড, ক্লাস রুম পরিষ্কার করা হচ্ছে।শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতধোয়ার বেসিন স্থাপন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্বের বিধি, হাতধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারও টাঙানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পুনর্বিন্যস্ত নতুন পাঠ্যসূচি প্রকাশ করেছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার ওয়েবসাইটে গতকাল এ পাঠ্যসূচি প্রকাশ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করে ‘কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে স্কুল-কলেজগুলোকে মানতে হচ্ছে এসব নির্দেশনা।
আরোও পড়ুন: ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিতে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এরপর যেকোনো দিন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করবে।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। প্রতিষ্ঠানের বেঞ্চগুলো ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করা হয়েছে। পরিপাটি কলেজের আঙিনা যেন শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আকতার গতকাল বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে কলেজ খোলার সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে হাতধোয়ার বেসিন স্থাপন হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্থানে স্থানে নির্দেশনা টানানো হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত রাখব। অধ্যক্ষ আরও বলেন, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে আমাদের জয়ী হতে হবে।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত রবিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে প্রাথমিকভাবে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ক্লাস হবে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাসে আসবে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে করোনার সময়কালীন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনার সুযোগ থাকবে না।
সব শ্রেণির একসঙ্গে ক্লাস না হওয়ায় বেশি শিক্ষার্থী থাকা স্কুল-কলেজেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে তেমন বেগ পেতে হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।
রাজধানীর ডেমরায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও নানা মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সরকারের নির্দেশনা পেলেই ক্লাস চালু করতে পারব। কোনোভাবেই গাদাগাদি বা ঠাসাঠাসি করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার সুযোগ নেই। প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসানোর পরিকল্পনা করছি আমরা। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বেঞ্চ সংযোজন করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘নো মাস্ক নো স্কুল’ ব্যানার টানানো হয়েছে স্কুলে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জটলা বা ভিড় এড়াতে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে বৃত্ত অঙ্কন করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রী থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান অধ্যক্ষ।
সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক দূরত্বের বিধি, হাতধোয়ার সঠিক নিয়ম, মাস্ক পরার নিয়ম, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়ম মেনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার পালন করা ও উৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেঝেসহ সব এলাকা প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পানি, স্যানিটেশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা রাখা এবং পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরেজমিন এসব সচেতনতা কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, মাউশির নির্দেশনা মেনে স্কুল খোলার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এখানে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. সাহাব উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য ৪২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে ৪২টি। সেক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল পরিচালনা করতে সমস্যা হবে না।
রাজধানীর মিরপুরে চারুলতা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক সৈয়দ ইমাম মেহেদী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা পেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা হবে।
৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাদরাসা খোলার প্রস্তুতি: স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের সব মাদরাসা খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে খুলে দিতে গাইড লাইন মেনে সব মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে এমন নির্দেশনা সব স্বতন্ত্র এবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল মাদরাসায় পাঠানো হয়েছে বলে অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
২১ সালের পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ২০২১ সালে যারা পরীক্ষার্থী আছে তাদের অটো পাস দেওয়া সম্ভব নয়। চলতি বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রাজধানীতে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন থেকে চার মাসে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে- এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শিক্ষার্থীরা তিন-চার মাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাবে।
এসএসসিতে অটো পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনোরকম স্বাস্থ্য বিধি না মেনে যেভাবে তারা আন্দোলন করছে, এভাবে বরং করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সুতরাং এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু সে সময় সংক্রমণের হার বেশি থাকায় সরকার তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অটো পাসের কথা চিন্তা করেছে। কিন্তু ২০২১ সালে যারা পরীক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।