শহীদ মিনারের পাশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা
এক যুগ পার হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। একটি লাইব্রেরিসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখনো কার্যকর হয়নি। আদালত জাদুঘরে পর্যটকদের ভাষা আন্দোলনসংক্রান্ত তথ্য জানাতে ব্রুশিয়ার রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া আদালত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার্থে ওই এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বেদির পাদদেশে সভা-সমাবেশ করা গেলেও মূল বেদিতে করা যাবে না।
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের মরণোত্তর পদক ও জীবিতদের জাতীয় পদক দিতে হবে। যেসব ভাষাসৈনিক জীবিত আছেন, তাঁদের কেউ সরকারের কাছে কোনো আর্থিক সাহায্য চাইলে দিতে হবে। একটি কমিটির মাধ্যমে ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা করে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ভাষাসৈনিকদের রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো ও সাধ্যমতো সরকারি সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কমিটি এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি কঠিন। কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মুনতাসির মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি এভাবে সম্ভব নয়। আমাদের ভাষা আন্দোলন ছিল একটি গণ-আন্দোলন। এ ধরনের আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেয়। নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের নাম তো ইতিহাসে আছে। কমিটির পক্ষ থেকে এই মতামত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’
সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি কঠিন কাজ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে লাইব্রেরিসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল নকশা ঠিক রেখে সেখানে নতুন কোনো অবকাঠামো করা যাবে কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে। বিষয়টির সঙ্গে বহু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
গত বছরের ১৪ মার্চের পর আদালত আর কোনো আদেশ দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই আদেশের পর আর কোনো অগ্রগতি আছে বলে আমার জানা নেই। মূল নির্দেশনার মধ্যে দুটি বিষয় নিয়ে ফের আদালতে গিয়েছিলাম। শহীদ মিনারের পাশে একটি জাদুঘর করা এবং ভাষাসৈনিক-শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা। এ নিয়ে আদালত একবার সাংস্কৃতিক সচিবকে তলব করলে তাঁরা আংশিক-অসম্পূর্ণ একটি তালিকা আদালতে জমা দিয়ে বলেছিলেন, সম্পূর্ণ তালিকা তাঁরা করবেন। কিন্তু সেটি আর হয়নি। ’
সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আরো বলেন, ‘শহীদ মিনারের পাশে একটি জাদুঘর করে সেখানে ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদ ও সৈনিকদের জীবনবৃত্তান্তসহ তাঁদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা জরুরি। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীরা শহীদ মিনারে আসেন। জাদুঘর হলে সেগুলো দেখে, পড়ে ভাষা ও জাতিসত্তার জন্য আমাদের সংগ্রাম, ইতিহাস তাঁরা জানতে পারতেন। ‘