ভারতে ব্যাপক যৌন সহিংসতার সমস্যাকে তুলে ধরতে গিয়ে ১৬ বছর বয়সী এক তরুণী দাবি করেছে যে, সে শত শত পুরুষের দ্বারা শত শত বার ধর্ষিত হয়েছে। আর তাঁর এই অভিযোগের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্রে সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর ভারতের শিশু কল্যাণ কমিটির (সিডব্লিউসি) কাছে দেয়া এক বিবৃতিতে গৃহহীন ওই মেয়েটি বলেছে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিড জেলায় ৪০০ জন লোক তাকে ধর্ষণ করেছে। সিডব্লিউসি চেয়ারম্যান অভয় ভিটঠালরাও ভ্যানাভে জানিয়েছেন, মেয়েটি তাঁর অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যের নামও উল্লেখ করেছে।
ভ্যানাভে বলেন, মেয়েটি যখন একটি বাস স্টপে বসে ভিক্ষা করছিল, তখন তিনজন পুরুষ তাকে যৌন কাজে বাধ্য করেছিল বলে অভিযোগ করে সে। যদিও অভিযুক্তদের সংখ্যাটা নির্ণয় করা কঠিন, তবে মেয়েটি অন্তত ২৫ জন অভিযুক্ত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারবে বলে উল্লেখ করেছে।
ভ্যানাভে আরও বলেন, এমনকি মেয়েটি এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেছিল, যে তাকে মারধর করেছে কিন্তু অফিসাররা তা নথিভুক্ত করেনি।
সিএনএন-এর তরফ থেকে সোমবার যোগাযোগ করলে বিড থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মেয়েটির অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছে যে, মেয়েটি ধর্ষণ সম্পর্কিত ও যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইনে একজন নাবালকসহ আট পুরুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, যাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি রয়েছে। সেইসঙ্গে তারা বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা আইনেও একটি মামলা নথি করেছে।
পুলিশের বিবৃতি অনুসারে, মেয়েটি পুলিশকে বলেছে যে, ১৩ বছর বয়সে ৩৩ বছর বয়স্ক এক পুরুষের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল, যে তাকে যৌন নির্যাতন করেছিল। মেয়েটি পুলিশকে আরও বলেছে, সে তার বাবার দ্বারাও যৌন নিপীড়িত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সে উপায়ন্ত্রর না পেয়ে উভয় বাড়ি ছেড়ে বাস স্টপে ঘুমাতে বাধ্য হয়।
বিষয়টি নিয়ে ভারতের নারী অধিকার কর্মী যোগিতা ভায়ানা বলেন, এটি ছিল “ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক (ধর্ষণ) ঘটনা।” তিনি আরও বলেন, “এই মেয়েটিকে প্রতিদিন অত্যাচার করা হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সব দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই।”
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অনুসারে, ২০২০ সালে ভারতে নারীদের ওপর ২৮ হাজারেরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ গত বছর প্রায় প্রতি ১৮ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি। কারণ অনেকেই ভয়ে বা সঙ্কোচে রিপোর্ট করতে পারেননি। সূত্র- সিএনএন।