অর্থনীতিস্বাস্থ্য

শখের বসে দুম্বা পালন শুরু, এখন কোটিপতি

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: মরু অঞ্চলের প্রাণী দুম্বা পালন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছেন বরিশালের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল কবির বাদল। ভবনের ছাদে ও বাড়ির উঠোনে খাঁচা তৈরি করে দুম্বা পালন করেন তিনি। এতে এলাকায় রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

মাত্র ৪টি দুম্বা দিয়ে খামার শুরু করেন বাদল। ৪ বছরের ব্যবধানে তার খামারে দুম্বার সংখ্যা ৬০টি। তার সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে আশপাশের অনেকেই দুম্বার খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। বাদলের খামারের সফলতাকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

বাদল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মেহেরপুর থেকে ৪টি দুম্বা কিনে আনেন পালনের জন্য। পরে নরসিংদী ও খুলনা থেকে আরও ৭টি দুম্বা কিনে খামারে পালন শুরু করেন তিনি। এতে তার ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। কিছুদিন আগে ৭ লাখ টাকায় ৬টি দুম্বা বিক্রি করেন বাদল। এখন তার খামারে দুম্বার সংখ্যা ৬০টি। যার বাজারমূল্য ৯০ লাখ টাকা। দিন দিন দুম্বার সংখ্যা বাড়ছে তার খামারে। শখের বসে দুম্বা পালন শুরু করে ৪ বছরের ব্যবধানে এখন এটিকে সফল ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন তিনি।

মরুর এই প্রাণি পালনে খুব একটা বেগ পেতে হয় না বলে জানিয়েছেন বাদল। ছাগল পালনের মতো দুইবেলা ঘাস আর দানাদার পশু খাদ্য এদের নিয়মিত খাবার। সবসময় মেজাজ বিগড়ে থাকায় মাদি দুম্বা থেকে আলাদা রাখা হয় পুরুষ দুম্বাগুলোকে। এই প্রাণি দলবদ্ধভাবে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। দুম্বাগুলোকে সপ্তাহে একদিন গোসল করানো হয়। রোগ-বালাইয়ের তেমন কোনো বিড়ম্বনা নেই দুম্বা পালনে। প্রাপ্তবয়স্ক মাদি দুম্বা প্রতি ৮ মাসে একটি কিংবা দুটি ছানা প্রসব করে। প্রজননের জন্য একটি পুরুষ দুম্বা ২০টি মাদি দুম্বার সঙ্গী হয়ে থাকে। ৬০টি দুম্বার খাবার ও পরিচর্যাকারী ৬ জন কর্মচারীর বেতন ও খাবারসহ মাসিক ব্যয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। দুম্বা পালনে পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকলেও গত কয়েক বছরে সবকিছু আয়ত্ব করে ফেলেছেন ৬ কর্মচারী।

মাত্র ৪ বছরে দুম্বা পালনে বাদলের ইর্ষণীয় বাণিজ্যিক সাফল্য অনুপ্রাণীত করছে প্রান্তিক পশু পালনকারীদের। দূর-দূরান্তের অনেকেই বরিশাল নগরীর  জিয়া সড়ক রোডে বাদলের খামার দেখতে আসছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দুম্বা পালনের নানা দিক সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন। এই সাফল্যে অনেকেই দুম্বার খামার করার কথা ভাবছেন।

বরিশাল বিভাগের একমাত্র দুম্বা খামার নিয়ে প্রথমে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের। মরু অঞ্চলের এই প্রাণি দক্ষিণের প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির মধ্যে লালন-পালন কতটা ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন তারা। দুম্বার খামারের সাফল্যের খবর পেয়ে এখন নিয়মিত বাদলের খামারের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল আলম বলেন, রিয়াজুল কবির বাদলের দুম্বার খামার এখন প্রান্তিক প্রাণি পালনকারীদের কাছে মডেল। তার খামারের সাফল্য নতুন করে ভাবাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগকে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে দুম্বা পালন লাভজনক ব্যবসা হবে বলেও তিনি আশা করেন।

আরো পড়ুন:

কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত কেশুরবাড়ির তাঁত পল্লী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *