স্বাস্থ্য

লিভারের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতা অপরিহার্য : ডা. মামুন আল মাহতাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: মানুষের সুস্থ থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যাপিত জীবনের পরিবর্তন। খাদ্যাভাস ও ঘুম নিয়মের মধ্যে না আনলে এবং অন্যান্য বিষয়ে সচেতন না হলে লিভার রোগের ঝুঁকি থেকেই যায়।

একথা বলেছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন’-এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে লিভার সচেতনতা বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, আমি যে বিষয়টি (লিভার) নিয়ে কাজ করি, সেখানে কিন্তু কিছু করার চেয়ে বলাই বেশি জরুরি। আমরা যদি ক্যান্সার নিয়েও কথা বলি, সেখানে কিন্তু বলার কিছু নেই। আমার বা আপনার ক্যান্সার হবে কি না, সেটা আমি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কিন্তু আমার বা আপনার লিভার রোগ হবে কি না, বিশেষ করে বাংলাদেশ বসে, সেটা আমরা ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা খুব আরামেই ঠিক করতে পারি লিভারে রোগ হবে কি না।

তিনি বলেন, লিভারের রোগ বলতে আমার কাছে মনে হয় মূলত তিন রকমের। এর মধ্যে রয়েছে জন্ডিস, ফ্যাটি লিভার, এইচবিএসএজি পজিটিভ বা হেপাটাইটিস-বি। এগুলোর মধ্যে জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়। জন্ডিস রোগের লক্ষণ মাত্র। বিভিন্ন কারণে মানুষের যেমন জ্বর হতে পারে, তেমনি ইনফেকশন (সংক্রমণ) থেকে শুরু করে ক্যান্সার—নানা কারণেই মানুষের জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিসটা মূলত আমাদের লিভারের কোনো ইনফেকশন বা বিভিন্ন রোগে হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হল ছোটদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস ও বড়দের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের সংক্রমণ। এই দুটো ভাইরাসই পানি বা খাদ্যবাহিত। তাই যারা শহরে বাস করি তারা বাসার বাইরে গিয়ে শুধু এটা যদি নিশ্চিত করি, যে পানিটা পান করছি সেটি ফোটানো পানি, আর যারা গ্রামে বাস করি তারা নলকূপের পানি ছাড়া খাবো না, আর যে খাবারটা আমরা খাবো সেটি গরম খাবার হবে, তাহলেই এ আর ই ভাইরাসটা আমাদের শরীরে ঢুকবে না।’

তিনি বলেন, লিভারে ছয় মাসের বেশি কোনো রোগ যখন বাসা বাঁধে তখন সেটি দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস। এর মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। এসমস্ত রোগে লিভার অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। লিভারের আকার-আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়, একটা সময় লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যাদের এমনটা হয় তাদের লিভার সিরোসিস হয়। যাদের লিভার সিরোসিস হয় তাদের পেটে পানি জমে যায়, রক্তবমি হয়। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়। একটা পর্যায়ে ক্যান্সারও হয়ে যায়।

ডা. স্বপ্নীল বলেন, লিভারের রোগ যে কারণে দেখা যায়, যেমন হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, বিভিন্ন জিনিস যেমন সেলুনে ব্যবহারের যন্ত্র বা সুঁই জাতীয় জিনিস থেকে সংক্রমণ করতে পারে, যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির জীবাণু সেসব যন্ত্র বহন করে। তাই এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সচেতন হতে হবে।

শুধু তাই নয়, মেয়েরা আজকাল বিভিন্ন জায়গা যেমন পার্লারে গিয়ে নাক কিংবা কান ফোটা করে, এসময় যে সুঁই জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেখান থেকেও এটি ছড়াতে পারে।

এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে তিনি বলেন, এইচবিএসএজি পজিটিভ বা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য দরকার টিকা নেওয়া। সেই সঙ্গে সচেতন হওয়া। লিভার মানুষের শরীরের বড় একটি অর্গান। সাধারণত লিভার রোগের কোনো লক্ষণ যেহেতু নেই তাই এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতাটাই বেশি জরুরি। আর এজন্য আমাদের দেশের মানুষের প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে না যাওয়া, শর্করা জাতীয় খাবার বেশি না খেয়ে পরিমাণ মত খাওয়া, প্রতিদিন বিকেলে হাঁটার অভ্যাস করা ও সুস্থ থাকার জন্য যাপিত জীবনের পরিবর্তন করে নিয়ম মেনে চলা দরকার।

এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশে ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি, সি-সহ বিভিন্ন লিভার রোগে আক্রান্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ হাজার মানুষ মারা যায় লিভার সংক্রান্ত রোগে। তাই লিভারের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *