পর্যটন ও পরিবেশ

লাউয়াছড়া উদ্যানে বাড়ছে উল্লুকের সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বন্যপ্রাণী উল্লুক অনেকের কাছেই ‘বনমানুষ’ হিসেবে পরিচিত। একসময় মানুষের মতো দল বেঁধে এরা প্রকাশ্যে লাউয়াছড়ায় ঘুরে বেড়াতো। বসবাসের উপযোগী বন-জঙ্গল উজাড় আর খাদ্য সংকটসহ নানা প্রতিকূলতায় এদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নেয়ায় এদের বংশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে দুর্লভ প্রজাতির এ প্রাণীটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ লাউয়াছড়া। চিরহরিৎ এ বনে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ। পর্যাপ্ত খাদ্য আর নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে উঠায় এ বনেই যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করছে বনমানুষ বা উল্লুক।
একসময় সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। শীত, গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতো। ভোরের সূর্য উঁকি দিলেই ঘর ছেড়ে সবাই বেরিয়ে পড়তো খাদ্যের সন্ধানে। রেইন ফরেস্ট বলে খ্যাত এ চিরসবুজ বনই ছিল তাদের বিচরণ ভূমি।
গবেষকরা জানান, ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ ও অপরিকল্পিতভাবে সামাজিক বনায়নের নামে জাতীয় উদ্যানের গাছ-গাছালি নিধনে গাছের ঘনত্ব কমে আসাসহ নানা বিরূপ প্রভাবে সংখ্যায় কমতে থাকে উল্লুক।
তবে কয়েক বছর ধরে দশ প্রজাতির ডুমুর গাছ সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত খাদ্য ও সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসায় এখন বনমানুষ বা উল্লুকের বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে করোনাকালীন দীর্ঘ সময় পর্যটক অনুপস্থিতিতে তাদের বংশ বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। চিরহরিৎ বনে এখন প্রতি ভোরে ৪ থেকে ৫ পরিবারের এক একটি সদস্য মহা আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা।
গবেষকরা বলছেন, ৭-৮ বছর বয়সে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এর আগে পরিবারের সঙ্গেই থাকে। এদের টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, প্রায় ১০২ প্রজাতির ফলের গাছ লাউয়াছড়ায় আছে। সে কারণে কিন্তু আমাদের উল্লুকগুলি খুব সহজভাবে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারছে এবং তাদের পরিবার সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উল্লুক বা এজাতীয় প্রাণী, যারা গাছে গাছেই থাকে সেসব গাছগুলোর বনায়ন আমরা করছি।
২০১৮ সালের গবেষণার তথ্য মতে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পনেরটি পরিবারে প্রায় ৪৫টি বনমানুষ বা উল্লুক রয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে দাবি বন বিভাগের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *