নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: বছর শেষ হওয়ার আগেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার পৌঁছে গেছে ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে পৌঁছে গেছে ৪ কোটি ১৪ লাখে, যা ২০০৯ সালে ছিল এক কোটি ৮ লাখে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৬টি, যা ২০০৯ সালে ছিল ২৭টি। বিদ্যুতায়িত বিতরণ লাইন ৬ লাখ ১১ হাজার কিলোমিটার, ২০০৯ সালে ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে।

এভাবে ২০০৯ সাল ও  ২০২১ সালে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালে এসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৯টি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ২৯৩ মেঘাওয়াট, বিদ্যুতায়িত বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৫৬ হাজার কিলোমিটার, বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার ৫২ দশমিক ৭৫ শতাংশ,  মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৪০ কিলোওয়াট ঘণ্টা, সেচ সংযোগ সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার কিলোমিটার বেড়েছে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বরাদ্দে এ খাতে বেড়েছে ২৫ হাজার ৩শ’ ৭৯ কোটি টাকা।

৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্যমাত্রা:

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। এভাবে ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সবার জন্য যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন ও মানম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বিদ্যুৎ বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, যেমন স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট মিটার, আন্ডারগ্রাউন্ড বিতরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্পসমূহের তালিকা :

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে  ৫৩টি প্রকল্প হলো টেকনিক্যাল এসিসটেন্স ফর বাংলাদেশ পাওয়ার সেক্টর ডেভেলপমেন্ট এন্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, প্রিপেইড মিটারিং ফর ডিস্ট্রিবিউশন কুমিল্লা এন্ড ময়মনসিংহ, চিটাগাং জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন সিষ্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, বিউবো, চট্রগ্রাম, ঘোড়াশাল-৩ রি-পাওয়ারিং প্রজেক্ট, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী জোন, ঘোড়াশাল ৪র্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, রংপুর জোন, বিউবো, রংপুর, তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ, বিউবো, খুলনা ৩৩০ মেঃওঃ ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মহেশখালী পাওয়ার হাব এর ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, ময়মনসিংহ জোন, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা জোন, সৈয়দপুর ১৫০ মেঃওঃ +-১০% সিম্পল সাইকেল (এইচএসডি ভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প,  বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন (২য় পর্যায়), কনস্ট্রাকশন অব ৪০০ মেঃওঃ +/- ১০% কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট এট রাউজান, চট্টগ্রাম, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প,  শাহজীবাজার ১০০ মেঃওঃ গ্যাস টারবাইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্প, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ গ্রাহক সংযোগ, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ), শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ, বাপবিবোর বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ), ন্যাশনাল পাওয়ার ট্র্যান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি গ্রীড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রীড স্ট্রেংদেনিং প্রকল্প (সংশোধিত), গ্রীডভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহে দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, পাওয়ার গ্রীড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনথেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি, পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রকল্প (পিজিসিবি অংশ: “মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন”) প্রকল্প, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি এন্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, পূর্বাঞ্চলীয় গ্রীড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতাবর্ধন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রীড সম্প্রসারণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন, আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জিআইএস উপকেন্দ্র দ্বারা প্রতিস্থাপন প্রকল্প, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ, ভারতের ঝাড়খন্ড হতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানী করার লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ঢাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ প্রকল্প, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প, প্রিপেইড মিটারিং প্রোজেক্ট অফ সিক্স এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি, কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/১১ কেভি এন্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি, এক্সপানশন এন্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প,  ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন প্রকল্প, ডিপিডিসির আওতায় ঢাকার কাওরানবাজারে ভূ-গর্ভস্থ উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ডিপিডিসি‌র আওতাধীন এলাকায় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পুনর্বাসন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ক্যাপাসিটর স্থাপন, ডেসকো এলাকায় সুপারভাইজরি কন্ট্রোল ও ডাটা একুইজিশন (স্কাডা) সিস্টেম স্থাপন, কন্সট্রাকশন অব ১৩২/৩৩/১১ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রীড সাব ষ্টেশন এ্যাট গুলশান ইন ঢাকা, ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্প।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *