নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফলকন ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে ধরা পড়েছে ১০টি ইলিশ। ধরা পড়া ইলিশ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পুকুরের ইলিশের স্বাদ নিতে অনেকেই মাছগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। উৎসুক লোকজন পুকুরে ধরা পড়া ইলিশের ছবি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেছেন। বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকালে ওই পুকুরে বেড়জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় অন্য মাছের সঙ্গে ইলিশগুলো ধরা পড়ে।

স্থানীয় চর ফলকন ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন পুকুরে ইলিশ ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে বেড় জাল দিয়ে দেশিয় প্রজাতির মাছ ধরার সময় ১০টি ইলিশ ধরা পড়ে। ধরা পড়া ইলিশগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরিফ জানান, মেঘনা নদীসংলগ্ন পুকুরটি ইজারা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি মাছ চাষ করেছিলেন। গত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘনার জোয়ারে পুকুরটি কয়েকবার ডুবে যায়। ওই সময়ই হয়তো ইলিশের ডিম কিংবা বাচ্চা ইলিশ ওই জোয়ারের পানির সাথে এসে আটকা পড়ে।

আরিফ আরও জানান, মাঝারি আকারের পুকুরটিতে এখনও অনেক পানি আছে। একদিনের বেড় টানায় যদি ১০টি ইলিশ ওঠে, তবে ওই পুকুরে আরও ইলিশ থাকতে পারে বলে তার ধারণা।

অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের শুরুর দিকে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ওই পুকুর ডুবে যায়। এ সময় মেঘনা নদী থেকে আসা লবণ পানির সঙ্গে ইলিশ ঢুকে পড়ে।’

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে এখন পুকুরে ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তার মতে, পুকুরে ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা গবেষণা করলে ইলিশ নিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া যাবে।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর যাবত উপকূলের বিভিন্ন এলাকার পুকুরে প্রায়ই ইলিশ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। পুকুরে ইলিশ পেলেই এটা নিয়ে হইচই পড়ে যায় । কারণ এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণাই পুকুরে ইলিশ চাষ নিয়ে আশার বাণী শোনাতে পারেনি।

চলতি বছরের আগষ্ট মাসে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়নের বয়ার চরে মো. বেলালের পুকুরে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।

এর আগে মার্চ মাসে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজনের আমিনপুর গ্রামের পুকুরে ৮টি ইলিশ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সময়ে পুকুরে ইলিশ চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চললেও তা এখনও বাস্তবায়নের পর্যায়ে আসেনি।

পুকুরে ইলিশ চাষ নিয়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে কথা হয়, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট তিন বছর গবেষণার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ উৎপাদন সম্ভব নয়। তবে কেউ চাইলে শখের বশে পুকুরে ইলিশের চাষ করতে পারেন। দীর্ঘদিন পুকুরে ইলিশ রাখা যাবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুকুরের ইলিশ নদী বা সাগরের ইলিশের মতো হয় না। পুকুরে ইলিশ বাঁচিয়ে রাখতে পারলেও এর বৃদ্ধি, স্বাদ ও বংশবিস্তার কোনোটিই নদীর মাছের মতো হয় না।

আনিসুর রহমান আরও জানিয়েছিলেন, এক বছরে নদীতে ইলিশ বাড়ে ৩ দশমিক ২ সেন্টিমিটার। আর পুকুরে বাড়ে ২ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া পুকুরে ইলিশের ডিম এলেও তা পরিপক্ব হয় না। এ ডিম দিয়ে ইলিশের বংশবিস্তার করাও সম্ভব হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে সম্ভব না হলেও শখের বশে পুকুরে ইলিশ চাষ করা যেতে পারে। এ জন্য কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর ও ৫০ শতাংশ আয়তনের পুকুর দরকার হবে।

আরো পড়ুন:

প্রথমবারের মতো ভোলায় হাইব্রিড আমন চাষে এলো সাফল্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *