নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: এক সপ্তাহ পর কঠোর লকডাউনে বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র। ফাঁকা রাস্তায় সীমিত সংখ্যক রিক্সা ও অনুমোদিত প্রাইভেট যানবাহনের চলাচল। ঢাকার রাস্তাঘাট যে এতো প্রশস্ত তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক সময়ে গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান দোকানপাটের দখলে থাকায় রাস্তাঘাটের প্রকৃত প্রশস্ততা সংকৃচিত হয়ে পড়ে।
পবিত্র ঈদুল আযহার কারণে এক সপ্তাহ শিথিল রাখার পর গত ২৩ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকাউন দিয়েছে সরকার। লকাউনে ফাঁকা রাজধানীর রাস্তাঘাট ও অলিগলি। করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় ফাঁকা রাস্তা দেখেই মুগ্ধ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স মাধুবী সাহা। শনিবার সকালে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, লকডাউনে রাজধানীর প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে উঠে, যেন বিদেশের কোনো শহর। রাস্তাঘাট ফাঁকা। রাস্তাঘাটের প্রকৃত প্রশস্ততা পাওয়া যায়। আমি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত অনেক সিটি ভ্রমণ করেছি।
অন্যান্য সিটির ভেতরের সড়কগুলো অনেক প্রশস্ত দেখে মাঝে মাঝে তিনি হতাশায় ভুগতেন। তার মনে হতো অপ্রশস্ত রাস্তার কারণেই হয়তো ঢাকায় সব সময় জ্যাম লেগে থাকে।
শনিবার জরুরি কাজে বাসা থেকে বেরিয়ে মিডফোর্ড থেকে শাহবাগ মোড়ে আসেন ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম। লকডাউনে রাজধানীর চিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, মূলত রাস্তাগুলোতে একটি লেন থাকে হকারের দখলে, আরেকটি লেনের সমান রাস্তা থাকে অবৈধ পার্কিং। মাত্র একটি কিংবা দেড়টি লেন থাকে গাড়ি চলাচলের জন্য। যে কারণে রাস্তা যে বড় এটাই বুঝতে আমার অনেক বছর পেরিয়ে গেলো। তিনি বলেন, বিশ্বের আর কোনো সিটির প্রধান সড়ক এভাবে হকারের দখলদারিত্ব দেখিনি। হ্যাঁ, অনেক সিটিতে নির্দিষ্ট কিছু সড়ক রয়েছে যেখানে হকার বসে সন্ধ্যার পর। ফুটপাত রক্ষা না করা গেলেও অন্তত রাস্তাগুলো যদি হকারমুক্ত রাখা যেতো তাহলে এমন জট হতো না। আর প্রধান সড়ক রক্ষা করা না গেলে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল কোনো কিছুই চূড়ান্ত জ্যামমুক্ত করতে পারবে না । লকডাউনে রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও লোকজন রাস্তায় নামতে না পারায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান আব্দুস সালাম।
লকডাউনে বৃদ্ধি পায় রাজধানীর পরিচ্ছন্নতা। দোকানপাট বন্ধ থাকায় নগরীর রাস্তাঘাট, অলিগলি ও ফুটপাতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ময়লা আবর্জনাও কম চোখে পড়েছে। বেড়েছে রাজধানীর বায়ুর বিশুদ্ধতা। ঢাকার রাস্তায় যেন অন্য রকম একটি চিত্র। প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি। উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম এবং উন্নত খুব কম রাষ্ট্রেই এমন দেখা যায়। কিছুটা উন্নত বলে পরিচিত কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক কোথাও এমন পুলিশি উপস্থিতি লক্ষণীয় নয়। কনস্টেবলের পাশাপাশি, সার্জেন্ট, টিআই এমনকি এসি, ডিসিকেও পথে দেখা মেলে।
ফাঁকা রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন, উন্নত রাষ্ট্রের মতো ঝকঝকে প্রশস্ত রাস্তা রাজধানী শহর ঢাকা নিজেকে নতুন রূপে জানান দিচ্ছে। নেই কোনো কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি, নেই হাইড্রোলিক হর্নের উৎপাত। স্বল্পসংখ্যক প্রাইভেট গাড়ি চলছে শাই শাই করে। আর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র রিকশার দাপট। তবে যাত্রী কম থাকায় আয় অনেক কমে গেছে। লকডাউনে প্রকৃত সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে রাজধানী।