নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: কৃষি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে চাকরির জন্য বসে না থেকে নিজেই উদ্যোগ নেন কিছু একটা করার। সেই আগ্রহ থেকেই কৃষি কাজে নেমে পড়েন ফরিদপুরের এনামুল হাসান গিয়াস। গতানুগতিক কোনো আবাদ না করে ভিন্ন নতুন কিছু করার চেষ্টায় ছিলেন। ইউটিউবে সার্চ করে বিভিন্ন দেশের কৃষি সম্পর্কে খোঁজ নেন। আর তাতেই বিভিন্ন প্রজাতির ধান আবাদে তার উৎসাহ বেড়ে যায়।
ইন্দোনেশিয়ার ‘রেড রাইস’র ঔষধী গুণাগুণ বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এই ধান আবাদে মাঠে নামেন গিয়াস। পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেড রাইস’ আবাদ করে ফরিদপুর জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি দুর্লভ ও দামি ‘ব্লাক রাইস’ও উৎপাদন করছেন। যা আগামী মাসেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। আর ‘রেড রাইস’ ধান কাটা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
ফরিদপুর কৃষি কলেজের সাবেক ভিপি এনামুল হাসান গিয়াস জানান, পড়ালেখা শেষ করে অল্প কিছুদিন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু কৃষির প্রতি আলাদা ভালোবাসা থাকায় সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই কৃষি কাজে নামেন। দেশের মানুষকে ভালো কিছু উপহার দিতে ইউটিউব দেখে নতুন কিছু আবাদের সন্ধানে নামেন। পেয়েও যান দুর্লভ ও দামি কিছু ধান আবাদের সন্ধান।
এ বছর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জোগাড় করেন ‘রেড রাইস, ব্লাক রাইস, ইন্ডিয়ান কস্তুরী ধানের বীজ। কৃষি কলেজের ২৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন ‘রেড রাইস’, ‘ব্লাক রাইস’ ও ইন্ডিয়ান কস্তুরী জাতের ধান।
প্রথম বছরেই বাজিমাত করেছেন তিনি। তার খেতজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে ভিন্ন জাতের ধানের শীষ। গিয়াস জানান, ‘রেড রাইস’ উৎপাদন করতে গিয়ে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ধান ও বীজ বিক্রি করে ২ লাখ টাকা পাবেন এমন আশা তার। গিয়াসের ‘রেড রাইস’ ও ‘ব্লাক রাইস’ ধান আবাদের খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা ছুটে আসছেন তার খেতে। অনেকেই ভিন্ন প্রজাতির ধানের ফলন ও খরচ কম হওয়ায় এই ধান আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অনেকেই গিয়াসের কাছ থেকে বীজ নেবার জন্য আগাম টাকাও দিচ্ছেন। ‘রেড রাইস’র গুনাগুণ দেখে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে ধান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গিয়াস জানান, তিনি এ বছর ধান উৎপাদন করে যে সাফল্য পেয়েছেন তাতে খুশি। আগামী বছর আরো বেশী জমিতে এ ধান আবাদ করবেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা তার কাছ থেকে বীজ কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই ধান আবাদে তিনি কৃষকদের পরামর্শও দিচ্ছেন।
তিনি জানান, শুধু ধান উৎপাদন করে ব্যবসা করাই তার উদ্দেশ্য নয়। ভেজালের এই যুগে মানুষকে রোগমুক্ত রাখতে তার এই প্রচেষ্টা। দেশে উপাদিত যে লাল চাল রয়েছে তার থেকে বেশ সরু এ ‘রেড রাইস’। অন্যান্য ধানের তুলনায় দ্বিগুন ফলন হয়। তাছাড়া উৎপাদন খরচও বেশ কম।
উদ্যোক্তা যুবক এনামুল হাসান গিয়াসের এমন সাফল্য দেখে অভিভূত জেলার কৃষি কর্মকর্তার। দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং মানুষকে ভালো কিছু দেবার মানসিকতার প্রশংসা করেছেন অনেকেই। গিয়াসের এমন উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হবে দেশের শিক্ষিত যুবক ও তরুণ সমাজ।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. হযরত আলী জানান, ‘রেড রাইস’ ধান আবাদ করে গিয়াস সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দেশের মানুষ এই ধানের চালের পুষ্টিগুণ সর্ম্পকে তেমন একটা জানেন না। এই ধান নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এই চালের ভাত খেলে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিক, ক্যান্সারসহ নানারোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। বাজারে এ চালের বেশ চাহিদা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদন এখন বিশ্বের বিস্ময় : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী