স্পোর্টস ডেস্ক, ধূমকেতু ডটকম: হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। এদিন প্রথমে ব্যাট করে ১৯৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় জিম্বাবুয়ে। যা কিনা তাদের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া। এর আগে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে ২১৫ রান করে জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। এর আগে পাঁচটি সিরিজের তিনটি ড্র হয়েছিল। দুইটি জিতেছিল বাংলাদেশ।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ে জিম্বাবুয়ে। ১৯৪ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নাঈমকে হারিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভার দেথে-শুনে ব্যাট করলেও ব্লেসিং মুজারাবানির করা তৃতীয় ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার ওপেনার নাঈম। আউট হওয়ার পূর্বে করেন মাত্র ৩ রান।
২০ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। পরপর দুই ছক্কায় ম্যাচে ফেরার আভাস দিলেও জঙ্গুয়ের করা ওভারের চতুর্থ বলে উইকেট হারান সাকিব। দুই ছক্কা ও এক চারে ১৩ বলে ২৫ রান করে ফেরেন সাকিব।
বড় রান তাড়া করতে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি পান সৌম্য, এ সিরিজে যেটি তার দ্বিতীয়। ফিফটির পর ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সৌম্য। দলীয় ১৩৩ রানে লুক জঙ্গুয়ের বলটা তুলে মারতে গিয়েছিলেন সৌম্য, তাতে লং অফে ধরা পড়েছেন তিনি। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৮ রান করে সৌম্য ফেরেন সাজঘরে। ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সৌম্যের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই তাণ্ডব চালান আফিফ। ৫ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রানে বোল্ড হলেন তিনি। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হন শামীম পাটোয়ারি। এসেই টানা তিন চারে বাংলাদেশকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে গেলেন তিনি। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন মাত্র ১৩ রান। তবে শামীমের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। জারাবানির বলে চাকাভার ক্যাচে ফিরেছেন তিনি। ২৮ বলে ৩৪ রান মাহমুদউল্লাহর। শেষদিকে শামীম-নূরুলের ব্যাটে ৪ বল ও ৫ উইকেট বাকি থাকতেই ১৯৩ রান তাড়া করে শেষ ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও জিতলো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই তেড়েফুড়ে খেলেন জিম্বাবুয়ে দুই ওপেনার তাদিওয়ানাসে মারুমানি এবং ওয়েসলে মাধেভেরে। তাসকিনের করা প্রথম ওভার থেকে ৮ রান তুলেন স্বাগতিকরা। সাইফউদ্দিনের করা দ্বিতীয় ওভারে কোনো বাউন্ডারি না আসলেও ৭ রান পায় জিম্বাবুয়ে। তৃতীয় ওভারে শরিফুল ১টি করে চার ও ছক্কা হজম করে মোট ১৩ রান খরচ করেন।
চতুর্থ ওভারে তাসকিনের ৬ বলে ৫টি চার মারেন মাধেভেরে। দুই ওপেনারের তাণ্ডবে শুরুতেই এলেমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে যখন ঝড়ের বেগে উড়ছে, তখনই ওপেনার মারুমানিকে থামান সাইফউদ্দিন। নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে মারুমানিকে ফেরান টাইগার এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। আউট হওয়ার আগে করেন ২৭ রান। তার বিদায়ে ভেঙেছে ৬৩ রানের ওপেনিং জুটি।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশি বোলারদের রীতিমতো তুলোধূনো করেন ওয়েসলি মাধেভেরে এবং রেগিস চাকাভা। এ সময় মাত্র ৩১ বলে দুজনে তুলেন ৫৯ রান। তখনই নাঈম-শামীমের যুগল ক্যাচে ফেরেন আগ্রাসী চাকাভা। সৌম্যের বলে উড়িয়ে মারেন চাকাভা, বাউন্ডারির একেবারে ওপর গিয়ে সেটি ধরেন নাঈম। কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পারায় বাউন্ডারি পার হওয়ার আগে সেটি ছুড়ে দেন বাউন্ডারির ভেতরে। ছুটে গিয়ে সেটি নেন শামীম হোসেন। ২২ বলে ৪৮ রান করে ফেরেন চাকাভা। গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এলো সৌম্যর বোলিংয়েই। এরপর নিজের পঞ্চম বলে বোল্ড করলেন সিকান্দার রাজাকে। খালি হাতেই ফেরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
এরপর চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি পান ওয়েসলি মাধেভেরে। দলীয় ১৪৬ রানে মাধেভেরের তাণ্ডব থামান সাকিব। ৩৬ বলে ৫৪ রান করেই ফেরেন তিনি, ইনিংসে মারেন ৬ চার। এছাড়া ব্যক্তিগত ২১ রানে আউট হন ডিওন মেয়ার্স। শেষদিকে বার্লের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৯৩ রান তুলে স্বাগতিকরা। ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন বার্ল।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নেন সৌম্য সরকার। একটি করে উইকেট নেন সাকিব, সাইফউদ্দিন ও শরীফুল। ২০১৩ সালের পর এবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজও। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়। শেষ ম্যাচে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হলেও শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ।