ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল জামিনে মুক্ত হয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ মিথ্যা।
রোববার (১০ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন তিনি। এর আগে একই দিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়ার আদালতে তার জামিন মঞ্জুর হয়।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার বক্তব্যের অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
এদিকে ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। এই মিছিলে বহিরাগতরা উসকানি দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তার নামে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ এবং ২২ মার্চ তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এদিকে ১৯ দিনের মাথায় আজ রোববার তাকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া। এদিন বিকেল ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে হৃদয় মণ্ডল মুক্তি পান।
কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে। স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে। প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই
এ বিষয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের আইনজীবী আমানুল্লাহ বলেন, গত ২২ মার্চ হৃদয় মণ্ডলের গ্রেপ্তারের পরদিনর জামিন চাইলে বিচারক আবেদন গ্রহণ করেননি। পরে ২৮ তারিখ আবারও জামিন আবেদন করা হয়। সেদিনও জামিন মেলেনি। এরপর জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করি।