রাশিয়ার মতো ভালো ভোট এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এই কথা জানান তিনি।
সিইসি কে এম নুরুল হুদা গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়া যান। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানকার ভোট পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন। রাশিয়ায় ব্যালটে ভোট হলেও ভোটিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত বলে মন্তব্য করেন।
সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মোটেই অনাস্থার জায়গা নয়। জনগণের আস্থা কমিশনের ওপর নেই—এ কথা কোনোভাবেই বলা যাবে না। কারণ জনগণ আপনাকে বলেনি যে আস্থা নেই। রাজনৈতিক দলের লোকেরা এটা বলেন। অনেক সময় তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না। অথচ তাঁরা বলেন যে নির্বাচনে জনগণের আস্থা নেই। জনগণের আস্থা যদি না-ই থাকত, তাহলে আপনারাই যে দেখাচ্ছেন ভোটে উপচে পড়া ভিড়। লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়। ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে। এটা কি আস্থার জায়গা নয়? জনগণের আস্থা অবশ্যই আছে। তারা অবশ্যই ভোট দিতে যায়।’
ইউপি নির্বাচনে সাম্প্রতিক সহিংসতা সম্পর্কে সিইসি বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যু আমাদের জন্য দুঃখজনক। এটা কারো কাম্য নয়। আমি শুনেছি, ভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে একজন মারা গেছেন। তবে এটা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করলে জানা যাবে এর জন্য কে দোষী বা কে দোষী নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গাফিলতিতে হতাহত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কোনো মৃত্যু চাই না। আমাদের অবশ্যই নির্দেশনা থাকবে, সব পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যেন সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়।’
রাশিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার নির্বাচনব্যবস্থা ভালো। আমাদের থেকে তাদের পার্থক্য হলো, সেখানে আমাদের মতো রাস্তাঘাটে ব্যানার, ফেস্টুন বা দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার নেই। নির্বাচনকেন্দ্রের বাইরে আমাদের এখানে প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকরা প্রচার চালান, রাশিয়ায় সেই সুযোগ নেই। সেটা করা হয় না। সে দেশে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা মূলত অনলাইনভিত্তিক হয়। ডিজিটাল সিস্টেম সেখানে অত্যন্ত উঁচু মানের। আমাদের দেশে কর্মীরা যেমন ঘরে ঘরে ভোটারদের কাছে যান অথবা লিফলেট দেন, এজাতীয় কালচার সেখানে দেখিনি।’ সিইসি বলেন, ‘রাশিয়া ভোটার ব্যবস্থাপনাটি ডিজিটাইজ করে ফেলেছে। তাদের প্রায় ৯৮ হাজার লোকেশন। এসব কেন্দ্র তারা সিসিটিভির আওতায় নিয়ে এসেছে। তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সব দেখতে পারে। বড় হলঘরের চারপাশের দেয়ালে লাগানো আছে সিসিটিভির স্ক্রিন। কোন কোন এলাকায় কখন কী ঘটে, সব তারা দেখতে পারে। প্রতিটির সঙ্গে তাদের লিংক আছে। কত ভোট কাউন্ট হয়, সেটাও তারা দেখতে পারে। মিনিটে মিনিটে তারা মনিটর করতে পারে। সাংবাদিকরাও সেটা মনিটর করেন।’
কে এম হুদা বলেন, ‘সেখানে তিন দিন তাদের ভোট হয়েছে। এই তিন দিনের মধ্যে কে কোন দিন ভোট দিতে পারবেন, এটা ডিস্ট্রিবিউশন করে দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটার বাক্স তিন দিন সংরক্ষিত থাকে। সেন্টারগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো।’
তিনি জানান, রাশিয়ায় ইভিএম পদ্ধতি নেই। তারা পাসপোর্ট দেখে ভোটার শনাক্ত করে। পরে একটি ব্যালট পেপার দেয়, ভোটার সেটি বাক্সে রাখেন। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সেটা ভেতরে ঢুকে যায়। কতজন ভোট দিলেন সেটা সঙ্গে সঙ্গে মনিটরে দেখা যায়। ভোট গণনা হয় হাতে হাতে। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, যাঁরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকেন, তাঁদের অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। অ্যাপ ব্যবহার করে তাঁরা যেকোনো জায়গায় বসে ভোট দিতে পারেন।
- গুলিতে নিহত কে এই রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ?
- মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের অভয়াশ্রমে ২২ দিন চলবে না স্পিডবোট